বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অপরিপক্ব লিচুতে স্বাস্থ্যঝুঁকি

  •    
  • ১৭ মে, ২০২৩ ০৯:৪৪

অপরিপক্ব লিচুর বিষয়ে দিনাজপুরের সিভিল সার্জন এ এইচ এম বোরহান-উল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘অপরিপক্ব লিচু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অপরিপক্ব লিচুতে এক ধরনের বিশেষ এনজাইম থাকে। খালি পেটে এই লিচু খেলে ওই এনজাইমের প্রভাবে পেট ব্যথা, বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যু হতে পারে।’

দিনাজপুরে বিগত বছরগুলোতে মের শেষ সপ্তাহ কিংবা জুনের শুরুতে বাজারে আসত পরিপক্ব লিচু, কিন্তু চলতি বছর দাবদাহে লিচু ঝরে পড়ায় বেশ আগেই ফলটি বিক্রি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর দিনাজপুরে ৫ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমি থেকে লিচু উৎপাদন হয়েছিল ৩১ হাজার ৭৯০ টন। আর চলতি বছর লিচু আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে।

গত বছর এই জেলায় ৬০০ কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হয়েছিল, তবে চলতি বছর লিচুর উৎপাদন কম হওয়ায় বিক্রি কিছুটা কম হবে।

গত বছর লিচুর মুকুল থেকে ৪৫ কোটি টাকার মধু উৎপাদন হলেও চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার মধু উৎপাদন হয়েছে।

অপরিপক্ব লিচুতে সয়লাব বাজার

কয়েক দিন ধরে দিনাজপুর শহরের গোর-এ শহীদ বড়ময়দান, পুলহাট, বাহাদুর বাজার, কালিতলা, ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড, সুইহারীসহ বিভিন্ন স্থানে অপরিপক্ক লিচু বিক্রি করতে দেখা যায়।

লিচুর ক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, ‘নতুন ফল উঠছে। বাচ্চাদের জন্য ২২০ টাকা দিয়ে ১০০ পিস লিচু কিনলাম। লিচু খেয়ে দেখলাম কিছুটা টক রয়েছে। নতুন ফল বাচ্চারা খাবে। তাই নিতেই হলো। আর কয়েক দিন গেলে তখন বাজারে ভরপুর লিচু উঠবে।’

লালমনিরহাট থেকে অফিসের কাজে মঙ্গলবার দিনাজপুরে এসেছিলেন মাধব চন্দ্র। লিচু দেখে ১০০টি কেনেন তিনি।

মাধব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অফিসের কাজে আমি লালমনিরহাট থেকে দিনাজপুরে আসছি। বাজারে লিচু দেখে পরিবাবের জন্য লিচু কিনলাম। ১০০ পিস লিচুর দাম ২৫০ টাকা নিল।

‘এখনও ভালোভাবে লিচু ওঠেনি। যেগুলো উঠেছে, সেগুলোর মান মোটামুটি ভালো। আধা পাকা হওয়ায় লিচুর স্বাদ একটু টক আছে। তবুও নতুন ফল হিসেবে কিনলাম।’

কী বলছেন চাষিরা

দিনাজপুর সদর উপজেলার পুলহাট, মাশিমপুর, কসবা, উলিপুর, শিকদারহাটে ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার গাছের লিচুগুলোর রং সবুজ থেকে লাল হতে শুরু করেছে। চাষিরা ভালো ফলনের আশায় বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। পাশাপাশি গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

চাষিদের কয়েকজন জানিয়েছেন, সুস্বাদু লিচু বাজারে উঠতে আরও কিছুদিন সময় দরকার।

মাশিমপুরের লিচু চাষি হযরত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। সেই তুলনায় এবার লিচুর দাম একটু বেশি হতে পারে। বাজারে যদি দাম বেশি পাই, তাহলে কিছুটা হলেও লাভবান হতে পারব।’

একই গ্রামের চাষি শামসুল হক বলেন, ‘এই এলাকার লিচুতে রং আসতে শুরু করেছে, তবে বাজারে ওঠাতে আরও এক মাসের মতো সময় লাগতে পারে। এবার লিচুর ফলন খুবই কম হয়েছে। দাম ভালো পেলে লাভবান হতে পারব। নাইলে তো লোকসান করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেশি দামের আশায় সদর উপজেলার বাইরের চাষিরা আগেভাগে লিচু বাজারে ওঠাচ্ছে।’

বাহাদুর বাজারের ফল ব্যবসায়ী দুলাল মঙ্গলবার বলেন, ‘এ মৌসুমে আজকে প্রথম আমি লিচু কিনে বিক্রি করতেছি। লিচুর আকারভেদে প্রতি হাজার লিচু ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে কিনছি। পরিবহন ও অন্যান্য খরচ আছে। আমরা ক্রেতাদের কাছে প্রতি ১০০ লিচু ২২০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি।

‘যে লিচু এখন বাজারে উঠতেছে, এগুলো আরও কয়েক দিন পরে উঠত, কিন্তু এবার প্রচণ্ড রোদ আর কম বৃষ্টির কারণে লিচুতে আগেই রং আসছে। লিচু ঝরে পড়তেছে, ফেটে যাচ্ছে। তাই চাষিরা লিচু পাকার সঠিক সময়ের আগেই বিক্রি করে দিচ্ছে।’

কালিতলা হকার্স মার্কেটের লিচু ব্যবসায়ী রানা বলেন, ‘আবহাওয়ার কারণে গেল বছরের তুলনায় এবার এক সপ্তাহ আগেই লিচুর রং আসছে। বৃষ্টিপাত নাই, অনেক রোদ। তাই লিচুর আকার বেশি বড় হচ্ছে না। যে লিচুগুলো উঠতেছে বাজারে এগুলো এখনও পরিপূর্ণ হয়নি। হালকা টক আছে।

‘কয়েক দিন পর মাদ্রাজি জাতের লিচু ভালোভাবে পাকবে। এর মাঝে যদি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে লিচুর দানা ভালো হবে। আর মিষ্টিও বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘লিচুর দাম ভালো থাকলেও ফলন কিছুটা কম। আজকে প্রতি হাজার লিচু ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে কিনেছি। আর ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে ঢাকার ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছি।

‘এসব লিচু বাজারে না তুললে তো নষ্ট হয়ে যেত। গত বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর মৌসুম ৭ থেকে ১০ দিন আগেই শেষ হয়ে যাবে মনে করি।’

অপরিপক্ব লিচুর বিষয়ে দিনাজপুরের সিভিল সার্জন এ এইচ এম বোরহান-উল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘অপরিপক্ব লিচু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অপরিপক্ব লিচুতে এক ধরনের বিশেষ এনজাইম থাকে। খালি পেটে এই লিচু খেলে ওই এনজাইমের প্রভাবে পেট ব্যথা, বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যু হতে পারে।

‘বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।’

বাজারে আগাম আসা অপরিপক্ব লিচু না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন।

এ বিভাগের আরো খবর