ঢাকায় দায়িত্বরত বিদেশি কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের কারণে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাড়তি নিরাপত্তার সুবিধাটা দেয়া হয়েছিল জঙ্গিবাদ উত্থানের আশঙ্কা থেকে। পরবর্তীতে এই সুবিধা কূটনীতিকরা সড়কে ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের কাজে ব্যবহার করছিলেন।
ঢাকায় থাকা চারটি দেশের কূটনীতিকরা এই বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা পেতেন। এছাড়া আরও এক থেকে দুটি দেশ যখন চাইত তখন তাদেরকেও বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া হতো।
বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না উল্লেখ করে মাসদু বিন মোমেন বলেন, ‘এগুলো তো চলমান বিষয়। এগুলোর সঙ্গে সবকিছু যুক্ত করাটা জল্পনার পর্যায়ে পড়ে।
‘তাদের যে পরিমাণ নিরাপত্তাকর্মী দেয়া হতো তা তো কমেনি। শুধু যানজট এড়ানোই মূল বিষয় ছিল। দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূতের বাসায় গানম্যানের (অস্ত্রধারী পুলিশ) বিষয়গুলো তো ইনট্যাক্ট (অটুট) রয়েছে। ভিয়েনা কনভেনশনে স্বাগতিক দেশ হিসেবে যে বিধান রয়েছে, আমরা সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মেনে চলব।’
নিরাপত্তার ঘাটতি না থাকায় বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদের উত্থানের যে আশঙ্কা ছিল, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে বা নিরাপত্তার বিবেচনায় তখন তাদের এটা (বাড়তি নিরাপত্তা) দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে যে মূলত ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের কাজটাই (বাড়তি পুলিশ পাহারা) করত।
‘সুতরাং আসল নিরাপত্তার যে বিষয় তা অপরিবর্তিত আছে। নিরাপত্তার দিক থেকে কোনো ঘাটতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এখন ঢাকা শহরে কিংবা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বা যা-ই বলি না কেন, সেটা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে।
‘সুতরাং সেটা একটা কারণ। দ্বিতীয়ত, নিজেদের সিস্টেমে (পুলিশের জনবল) বলা হচ্ছে, কীভাবে স্ট্রিম লাইন করা যায়; কারণ এখানে ঘাটতিও আছে।’
বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা এই সময়ে প্রত্যাহারের কারণ জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আপনারা সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। কোনো না কোনো সময় তো করতে হতো। এই সময় নিয়ে আপনারা নানাভাবে জল্পনা করছেন। এটা এমনিতেই করা হতো। আরেকটা জিনিস বলতে পারি। বিভিন্ন দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তা দেয়ার যে যে মৌলিক বাধ্যবাধকতা আছে, সেটা কখনোই আমরা আপস করব না, এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’
পুলিশের পরিবর্তে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার একটা প্রস্তাব পরিকল্পনায় আছে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থাও আমরা রেখেছি। স্পেশাল ব্যাটালিয়ন অব আনসার আছে। তাদের অনেক দিন ধরেই তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য সামান্য পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকতে পারে।
কাল আমরা তাদের কাছ থেকে জেনে সকালে বা একসময় আনসারের ডিজির সঙ্গে বসে তাদের কী কী সুবিধা আছে তা জানব। সেগুলো আমরা তখন দূতাবাসগুলোকে জানিয়ে দেব। যারা তাদের চাইবে, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগও করিয়ে দেব।’
বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের পতাকা ব্যবহারের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আসছে কি না- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে এটা সত্যি যে উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, আমি নিউ ইয়র্কে ছিলাম। সেখানে পতাকা ওড়ানোর ব্যবস্থা নেই।
‘অন্যদিকে ইতালি ও জাপানে আমি যখন রাষ্ট্রদূত ছিলাম, আমি তো পতাকা উড়িয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রীয় সব সভায় পতাকা ওড়ানোর বিধান আছে। আবার কিছুটা তো নিজের ওপরও থাকে বিষয়টা।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমি যদি বাজারে যাই, আমি যদি আমার সহকর্মীর বাসায় ব্যক্তিগত কারণে যাই, তখন তো পতাকা ওড়াব না। সেটা তো নিজেদের ডিসক্রিশনের (বিবেচনা) ওপর নির্ভর করে। কাজেই রাষ্ট্রদূতদের সেই বোধ আছে, তাদের কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়।’