দফায় দফায় শিলাবৃষ্টির কারণে ২০২২ সালে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ঠাকুরগাঁওয়ের লিচু ব্যবসায়ীদের। এ বছর জেলার অধিকাংশ লিচুর বাগানে ফলন ভালো হয়েছে। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে তাই লাভের স্বপ্ন দেখছিলেন বাগান চাষী ও লিচু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু, তীব্র তাপপ্রবাহে চাষীর সে স্বপ্নও মলিন হওয়ার পথে।
স্বপ্নের লিচুতে দেখা দিয়েছে তাপের ক্ষত। এতে আবারও ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
সদর উপজেলার মুন্সিরহাট বাগান বাড়ি, আকচা মুন্সিপাড়া, হরিহরপুর, কালাপাহাড়সহ বেশ কয়েকটি জায়গার বড় বাগান ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে লিচুর আকৃতি এখনো অনেক ছোট। কয়েকদিন ধরে তীব্র রোদের কারণে অধিকাংশ লিচুর চামড়া পুড়ে গেছে। লিচুর আকৃতি বড় হতেই পোড়া চামড়া ফেটে যাচ্ছে। ফলে এবারও লিচুতে বিপর্যয় ও লোকসানের আশঙ্কা করছেন বাগান চাষী ও লিজ নেয়া বাগান ব্যবসায়ীরা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বাগান ব্যবসায়ী মোকসেদ ইসলাম কুড়ানু জানান, আগের বছর শিলাবৃষ্টিতে তার সব লিচু ঝরে যায়। সে কারণে প্রায় আট লাখ টাকা লোকসান হয়েছিল তার। এ বছর বাগানগুলোতে ফলন ভালো হলেও লিচুর আকৃতি এখনো হয়নি।
ঝড়বৃষ্টির কবলে না পড়লেও তীব্র রোদে লিচুর একপাশের চমড়া পুড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন লিচু যত বড় হচ্ছে, ততই ফেটে যাচ্ছে।’
এ বছর বাগানগুলো থেকে ১০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করে ঋণ পরিশোধের আশা করলেও বর্তমানে তিনি প্রায় ৫ লাখ টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
আকচা মুন্সিপাড়ার একটি লিচু বাগানে সেচ দিতে দেখা গেল বাগান চাষী খায়রুল ইসলামকে। তিনি বলেন, ‘তীব্র রোদের কারণে লিচু গাছগুলো পানি পাচ্ছে না। এদিকে চামড়া পুড়ে লিচু ফেটে যাচ্ছে। এমন হতে থাকলে ফলন থাকবে ঠিকই, কিন্তু লিচুর দাম পাওয়া যাবে না।’
তাই সেচ দিয়ে লিচু বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছেন লিচু ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁওয়ে লিচুর ব্যবসা করি। বাগান কিনে নিই, কখনো পাইকারিতেও লিচু কিনি।
‘গত বছর শিলাবৃষ্টিতে ১০০ গাছ থেকে এক হাজার লিচু পাইনি। এ বছর আবার লিচু রোদে পুড়ছে। আমরা ব্যবসায়ীরা যদি এ বছরও লোকসানে পড়ি, তাহলে সরকার যেন আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকায়।’
গত কয়েক বছর ধরে লিচু বাগানে লোকসান গুণছেন অনেক বাগান চাষী। এমনই একজন আজাদ আলী। এ বছর লিচু বাগান কেটে ফেলেছেন বলে জানান তিনি।
দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘লিচু লাভজনক ফসল হলেও অনেক ঝুঁকি আছে। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, ফলন ও বাজার সবকিছুর সঙ্গে লড়াই করে এ ব্যবসা করতে হয়। কখনো লোকসান হলে কোন প্রণোদনা পাইনি। তাই লিচুর বাগান কেটে অন্য চাষাবাদ শুরু করেছি।’
যোগাযোগ করলে এ বছর লিচুর আবাদ ও বাগান সংখ্যার হিসাব জানাতে পারেনি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সে সঙ্গে তীব্র তাপদাহে কী পরিমাণ লিচুর ক্ষতি হতে পারে, সে বিষয়েও কোনো ধারণা দিতে পারেনি অধিদপ্তর।
তারা বলছে, উৎপাদনের হিসেব থেকে সঠিক পরিসংখ্যান জানাতে পারবে তারা। এখনো ঠাকুরগাঁওয়ে গাছ থেকে লিচু সংগ্রহ শুরু হয়নি।
তবে তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে অনেক বড় বড় বাগান কেটে ফেলা হয়েছে।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে জেলার ২৫৬টি বাগানে ৭০৫ হেক্টর জমিতে ৫৯৯৮ টন লিচু উৎপাদন হয়েছিল।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দুই কারণে লিচু ফেটে যেতে পারে। প্রথমত, বোরন সারের ব্যবহার ঠিকমতো না হলে; দ্বিতীয়ত, অনেকদিন পরে বৃষ্টি হলে। এখন অনেক রোদ। তাই লিচুর গায়ে দাগ পড়ছে।’
‘তবে চাষীদের নিয়মিত সেচ ও সারের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।