বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থকদের ওপর পিস্তল ঠেকিয়ে অতর্কিত হামলার অভিযোগে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্নাসহ ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় রোববার গভীর রাতে কাউনিয়া থানার পুলিশ মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্নাসহ ১০ জনকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন বরিশাল নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না ও তার ভাই নাদিম, মান্নার সহযোগী কাশিপুর এলাকার পারভেজ হাওলাদার, বঙ্গবন্ধু কলোনী এলাকার শান্ত ইসলাম, কাউনিয়া এলাকার মেহেদী হাসান সম্পদ, মিজানুর রহমান শাওন, মামুন হাওলাদার, রাসেদ হাওলাদার, আল আমিন হাওলাদার এবং নান্টু স্বর্নামত।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশালের কাউনিয়া থানার উপপরিদর্শক সাইদুল হক জানান, বরিশাল নগরীর বিসিক এলাকা থেকে আট জন এবং হাসপাতাল রোডের একটি বাড়ির পিছনের বাগান থেকে মান্নাসহ দুই জনকে আটক করা হয়েছে।
রোববার রাত ৯টার দিকে বরিশাল নগরীর মহাশ্মশান এলাকায় হওয়া এ হামলার ঘটনায় মনা আহম্মেদ, আব্দুল হালিম, মো. জাহিদ ও সুজন নামে চারজন আহত হন। যাদের মধ্যে তিনজনকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলায় আহত মনা আহম্মেদ বলেন, ‘কাউনিয়া শ্মশান ঘাটের ওই জায়গা দিয়ে আমরা ৮ থেকে ১০ জন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত ভাইয়ের নির্বাচনী ওয়ার্ক করছিলাম। তখন আকস্মিক এক থেকে দেড়শত যুবক এসে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলার সময় রইজ আহম্মেদ মান্না আমার কলার ধরে এবং গালিগালাজ শুরু করে। আর ওই সময় মান্না আমার পেটে পিস্তল ঠেকালে আমি আর নড়াচড়া করতে পারিনি। এরপর মান্নার ড্রাইভারসহ সহযোগীরা দা দিয়ে কোপ দেয়ার পাশাপাশি আমাকে রড দিয়ে পিটিয়েছে। আমার সাথের লোকজনকেও অতর্কিতভাবে মারধর করছে। আমার সাথে থাকা ছোট ভাইয়ের ছেলেকেও রেহাই দেয়নি ওরা, তাকেও মারছে।’
হামলার শিকার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম বলেন, ‘হামলাকারীদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমরা কাউনিয়া কালাখার বাড়ির সামনে থেকে সার্কিট হাউজের সামনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে যাবো বলে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ দেড় থেকে দুইশত পোলাপান একেক জনকে একেক দিকে নিয়ে যায়। মারধরের সময় নিজেকে রক্ষার চেষ্টা চালাতে গিয়ে কাউকে চিনতে পারিনি, তবে মান্নার কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ওরাই বলছে।’
বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না বলেন, ‘পুরোটাই মিথ্যা অভিযোগ, আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে, আজ ৫ দিন ধরে আমি সিসি ক্যামেরার আওতায় আছি। যারা বলে আমি কাউকে অস্ত্র ঠেকাইছি বা মারধর করছি তারা মিথ্যা বলছে। প্রয়োজনে আপনারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নেন, আর তা নিলেই বুঝতে পারবেন সিসি ক্যামেরার আওতাধীন এলাকায় থেকে অন্য এলাকায় কিভাবে যেতে পারি। আমি অন্যায় করে থাকলে সঠিক তথ্য নিয়ে আমার বিচার করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা ছিলে, তারা নৌকাকে সামনে রেখে আমাদের বরিশাল থেকে বিতাড়িত করতে চায়। তাই বিভিন্নভাবে তারা মিথ্যা ষড়যন্ত্র করছে এবং যাতে বরিশালে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ভাই না আসতে পারে সেজন্যও ষড়যন্ত্র করছে।’
এদিকে এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ের দপ্তর সেলের প্রধান অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক।
বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, এখনও নির্বাচনী কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এর আগে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। যারাই জড়িত থাকুক না কেন কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল জানান, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।