সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মধ্যে ক’দিন ধরেই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হচ্ছে। নিজের গণসংযোগকালে ১০ বছর ধরে মেয়র থাকা আরিফের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নৌকার প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগও এনেছেন। আর দু’জনই একে অপরকে নগরের ‘বহিরাগত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগেই সিলেটের রাজনীতিতে বিষয়টি উত্তাপ ছড়াচ্ছিলে। এমন অবস্থায় রোববার এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের দেখা মিললে।
বিকেলে নগরে এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়ে যায় আরিফুল হক চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর। দেখা হতেই ‘বড় ভাই’ বলে আরিফকে বুকে আহ্বান করেন আনোয়ারুজ্জামান। হাসিমুখে সাড়া দেন আরিফও। হেসে কোলাকুলি করেন দু’জন। পরস্পরের কুশল বিনিময়ও করেন তারা। তবে মিনিটখানেকের এই সাক্ষাতে তেমন কোনো আলাপ হয়নি দু’জনের।
সিলেট সিটি নির্বাচনে ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ হবে ২১ জুন। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। অন্যদিকে এ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে নির্বাচনে না এলেও দলটির মনোনয়নে টানা দু’বার মেয়র হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে নগরে গুঞ্জন আছে। ২০ মে তিনি সমাবেশ করে এ ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন বলে জানিয়েছেন।
তবে আরিফকে প্রতিদ্বন্দ্বী ধরে নিয়েই প্রচার চালাচ্ছেন আনোয়ারুজ্জামান ও তার অনুসারীরা। আরিফের ১০ বছর মেয়রের দায়িত্বের সময়ের নানা সমালোচনাও করছেন তারা।
শনিবারই এক অনুষ্ঠানে এসব সমালোচনার জবাবে আরিফুল হক রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সম্প্রীতি নষ্ট না করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের। এ নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়ার সময়েই রোববার বিকেলে দেখা হয়ে যায় দুই নেতার।
আনোয়ারুজ্জামান ও আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, বিকেল ৪টায় নগরের দরগাহ গেট এলাকায় কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সোলেমান হলে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করে ‘সম্মিলিত নাগরিক উদ্যোগ’ নামের একটি সংগঠন।
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে স্মরণসভায় যোগ দেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। স্মরণসভায় বক্তব্য দেয়ার পর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মিলনায়তন থেকে বের হন আরিফুল হক চৌধুরী। তখনই ওই সভায় যোগ দিতে মিলনায়তনে ঢুকছিলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। মিলনায়তনের সিঁড়িতেই দেখা হয় তাদের।
স্মরণসভার আয়োজক সংগঠন সম্মিলিত নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার আরশ আলী বলেন, ‘সিলেটের রাজনীতে সবসময়ই সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও তা ব্যক্তিগত রেষারেষিতে কখনো রূপ নেয়নি। আশা করি, এবারের নির্বাচনের প্রার্থীরাও এ ধারা বজায় রাখবেন।’