বীর মুক্তিযোদ্ধা তিন সেনা কর্মকর্তা হত্যায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে মামলা হওয়ার ঘটনাকে সরকারের সূদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে উল্লেখ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রোববার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা সর্বৈব মিথ্যাকে আবারও সামনে তুলে আনা হয়েছে ৪৮ বছর পর। নাহিদ ইজহার খান তার পিতা হত্যার হুকুমদাতা হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। এটা সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী গোষ্ঠীর একজন ক্রীড়নক মাত্র।
‘উদ্দেশ্য হলো- জনগণ যখন গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করেছে, যখন মানুষ রাস্তায় বেরুতে শুরু করেছে, যখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়েছে সরকারের ওপর, তখন এ ধরনের একটি বিষয় তুলে ধরে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। চলমান ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে দেশি-বিদেশি গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানো।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে শেখ হাসিনা ও তার কুশীলবরা নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। এই মামলা সেই ষড়যন্ত্রের একটি উদাহরণ মাত্র। সরকারের তরফ থেকে আগামীতেও এ ধরনের ষড়যন্ত্র চলমান থাকবে।
‘বিশেষ করে সরকার পতনের সময়কাল যত এগিয়ে আসবে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও বিএনপির বিরুদ্ধে এই ধরনের ষড়যন্ত্রের মাত্রা আরও বাড়বে।
‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব ষড়যন্ত্রের জাল নস্যাৎ করে দেয়া হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, “রূঢ় সত্য হচ্ছে, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী নিশিরাতের নির্বাচনের বিনাভোটে গঠিত সংসদের একজন সদস্য নাহিদ ইজহার খান সম্ভবত তার নিজের মায়ের লেখা বইটাও পড়ে দেখেননি।
“তার মা নীলুফার হুদা ‘কর্নেল হুদা ও আমার যুদ্ধ’ গ্রন্থে স্পষ্টভাবেই লিখে গেছেন যে কর্নেল হুদাকে হত্যার সময় কী পরিস্থিতি ছিল। সেখানে উপস্থিত মানুষের জবানবন্দিই প্রমাণ দেয় সেদিন জিয়াউর রহমান কর্নেল নওয়াজিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন খালেদ মোশাররফ, কর্নেল নাজমুল হুদা ও মেজর এটিএম হায়দারকে রক্ষা করার।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওই গ্রন্থের ১৩৪ নম্বর পাতায় সুস্পষ্ট ভাষায় হত্যাকাণ্ডের পেছনে কর্নেল তাহেরের (আবু তাহের) সংশ্লিষ্টতার বিষয় উঠে এসেছে। কর্নেল তাহেরের নির্দেশে হত্যাকাণ্ডের চারদিন আগে থেকে কর্নেল হুদাসহ অন্যদের ভারতের চর হিসেবে সেনাবাহিনীতে প্রচার করেছিল জাসদ-গণবাহিনী।’
মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরীও বইটির ভূমিকায় একই কথা লিখেছেন বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের নির্মম পরিহাস হচ্ছে, কর্নেল হুদার হত্যাকারী জাসদ-গণবাহিনীর উপ-প্রধান হাসানুল হক ইনু এবং কর্নেল তাহেরের ভাই ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল সংসদে এমপি হিসেবে গলা ফাটাচ্ছেন।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদা মোশাররফ বীর উত্তম, কর্নেল নাজমুল হুদা বীর বিক্রম ও লেফটেন্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তমকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার ৪৮ বছর পর চলতি বছরের ১০ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজহার খান।