হোটেল মালিককে মারধর করে বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। মারধরের প্রতিবাদে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। খাবার না পেয়ে এখন রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
খাবারসহ সকল প্রকার দোকানপাট খোলার দাবিতে শনিবার দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের বরাতে জানা যায়, ভাতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুক্রবার এক হোটেল ব্যবসায়ীর সাথে বাকবিতণ্ডা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এক পর্যায়ে তারা ওই হোটেল মালিককে মারধর করেন। এর প্রতিবাদে স্থানীয় দোকান মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শনিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের সব দোকানপাট বন্ধ রেখেছে ব্যবসায়ীরা।
দুপুর পৌনে ১২টায় হাবিপ্রবির প্রধান ফটকের সামনে মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের আশ্বাসে দুপুর সোয়া ১টার দিকে অবরোধ তুলে নেন তারা।
এ বিষয়ে হাবিপ্রবি’র কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী সজিব আহম্মেদ বলেন, ‘৩ মে ভাত খেয়ে গেছি দশ টাকা প্লেট। কিন্তু পরদিন হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে করেছে ১৫ টাকা প্লেট। আগে যে চালটা খাওয়াতো, এখনও সে চালের ভাত দেয়। তারা হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব কথা বলতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে দোকান মালিকের বাকবিতণ্ডা হয়। তাই তারা সব দোকান বন্ধ রেখেছে।
‘সকাল থেতে আমরা না খেয়ে আছি। তাই আমরা রাস্তা অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি।’
মামুন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বাইরে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। তারা (দোকান মালিক সমিতি) একটা সিন্ডিকেট করে হঠাৎ আজকে সব দোকান বন্ধ রেখেছে। বাজারে কোনো কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল থেকে আমরা কিছু খেতে পারিনি। আমরা ব্যবসায়ীদের কালো হাত ভেঙ্গে দিতে চাই। তাই রাস্তা অবরোধ করেছি।’
অর্থনীতি বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী বুলবুল আহাম্মেদ বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি আদায়ের জন্য রাজপথ অবরোধ করেছি। আমার জনদূর্ভোগ চাই না। কিন্তু আমরাও তো এখানে দূর্ভোগের শিকার হচ্ছি।
‘আমরা সকাল থেকে কিছু খাইনি। তারা ইচ্ছা করল, আর দোকান বন্ধ করে দিল। এখানে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তারা অস্বাভাবিকভাবে ভাতের দাম বাড়িয়ে দিলো। সামগ্রিকভাবে আমরা একটা সিন্ডকেট এর কাছে আবদ্ধ।’
কলেজ প্রশাসন আসে আশ্বাস দেয়, কিন্তু বাস্তাবায়ন হয় না বলে জানান বুলবুল।
দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম ঘটনার বিষয়ে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমরা একটা কমিটি করেছি। কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নীরব প্রতিবাদ হিসেবে আমরা দোকান বন্ধ রেখেছি।’
শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ভাদের দাম নিয়ে কয়েকদিন ধরে হোটেলগুলোতে গণ্ডগোল চলছে। শুক্রবার একটা দোকানে হামলা করে ভাংচুর করেছে তারা।
‘বিষয়টি আমরা প্রক্টরকে জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, ছাত্ররা আর এমন ঘটনা ঘটাবে না।’
এদিকে মহসড়ক অবরোধের কারণে রাস্তার দুপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
রংপুর থেকে আসা সোবাহান নামের একজন পথচারী বলেন, ‘একটু কিছু হলেই মানুষ রাস্তা অবরোধ করে। অবরোধের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয়। রাস্তা বন্ধ থাকায় গাড়ি যেতে পারছে না। এদিকে গরমে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’
সৈয়দপুর থেকে আসা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘নাতীকে সাথে নিয়ে বেটির বাড়ি যাচ্ছি। এখানে এসে দেখি রাস্তা বন্ধ। কখন ছাড়বে, কখন কি হবে, জানিনা। আকাশে অনেক রোদ আর গরম। গরমে কষ্ট হচ্ছে আমাদের।’
দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম বলেন, ‘খাদ্যদ্রব্যের মূলবৃদ্ধি নিয়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। তবে মূল্য সমন্বয় করে দোকান চালু করার আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা।’
এ ব্যাপারে হাবিপ্রবির ছাত্র পরামর্শ বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ডা. ইমরান পারভেজকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি তাকে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও সেটির জবাব দেননি তিনি।