বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাতিয়ায় স্থানীয়দের হাতে অবরুদ্ধ দুই পুলিশ কর্মকর্তা

  • প্রতিনিধি, নোয়াখালী   
  • ১২ মে, ২০২৩ ১৭:৩১

নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি সদস্যের সাথে দুর্ব্যবহার করায় এ ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যাওয়ার পর এএসপি সাইফুল আলম ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করলে বিষয়টি মীমাংসা হয়।’

লক্ষ্মীপুর থেকে নোয়াখালী গিয়ে বিপাকে পড়লেন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় গিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রস্তুতিসভা করার সময় তাদের পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয়রা।

হাতিয়া উপজেলার হরনি ইউনিয়নের টাংকি বাজার পুলিশ ক্যাম্পে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

অবরুদ্ধ পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সাইফুল আলম চৌধুরী এবং রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন।

পরে রাত ১০ টার দিকে নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন ও হাতিয়া সার্কেলের এএসপি আমান উল্ল্যাহসহ অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।

এ ঘটনায় হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীকে অভিযুক্ত করেছেন ওসি আলমগীর হোসেন।

তবে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার সীমানা বিরোধের জেরে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

এ ঘটনায় সামজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভের একটি ভিডিওতে হরনি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাইনউদ্দিনসহ কয়েকজনকে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে অশ্লীল ভাষায় বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এ সময় তারা হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা আলীর পক্ষে স্লোগান দেন।

স্থানীয়রা জানান, বিকেলে লক্ষ্মীপুর জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (রামগতি সার্কেল) সাইফুল আলম চৌধুরী ও রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন টাংকির বাজার পুলিশ ক্যাম্পে আসেন। পরে তারা ক্যাম্পের গোলঘরে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এর কিছুক্ষণ পরে ওই গোলঘরে আসেন হরনি ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাইনউদ্দিন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবুল হোসেন সুজন ও টাংকিরঘাট বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখওয়াত হোসেন। তারা এই এলাকাটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত বলে পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে চলে যেতে বলেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা ওই ইউপি সদস্যদের ক্যাম্প ছেড়ে চলে যেতে বললে তারা বাজারে উপস্থিত লোকজনকে নিয়ে ক্যাম্প ঘেরাও করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েক শ লোক জড়ো হয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।

ইউপি সদস্য মাইনউদ্দিন বলেন, ‘রামগতি থানার ওসি ও এএসপি সার্কেল আমাদের না জানিয়ে হাতিয়া এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছেন। আমি তাদের চলে যেতে বললে তারা খারাপ ব্যবহার করেন। এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের যেতে দেয়া হবে না।’

রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, “উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আসন্ন ঘুর্ণিঝড় ‘মোখা’র সময় টাংকি বাজার পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যদের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার জন্য ওখানে যাই।

“আমরা ক্যাম্পের গোলঘরে বসে বৈঠক করছিলাম। এ সময় ক্যাম্পের বাইরে কিছু লোকজন ‘রামগতির পুলিশ কেন এসেছে’ বলে স্লোগান দেয়া শুরু করে। স্লোগান দিয়ে তারা অনেক লোক জড়ো করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে নোয়াখালীর পুলিশ কর্মকর্তারা আসলে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।”

এ ঘটনার জন্য হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীকে দায়ী করে ওসি আলমগীর বলেন, ‘এ ঘটনা হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর ইঙ্গিতে ঘটেছে। দুই জেলার সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে তিনি ইস্যু সৃষ্টি করছেন, যেন রামগতির পুলিশ সেখানে না যায়।’

বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি সদস্যের সাথে দুর্ব্যবহার করায় এ ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যাওয়ার পর এএসপি সাইফুল আলম ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করলে বিষয়টি মীমাংসা হয়।’

এএসপি সাইফুলের বক্তব্য সঠিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এ ক্যাম্পটি নোয়াখালী জেলার। ওনারা আনঅথরাইজডলি এখানে এসেছেন। স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে ওই ক্যাম্পে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের পাশাপাশি নোয়াখালীর ১০ জন পুলিশ সদস্যকে সংযুক্ত করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া ও লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে কয়েকযুগ ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধে জেরে দুই উপজেলার বাসিন্দারা এখন মুখোমুখি।

স্থানীয়রা বলছেন, এ ঘটনার জের ধরে দুই উপজেলায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর