সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর সহযোগিতায় ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এই খাতকে এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিকভাবে পরিকল্পনা নেয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বহু দেশ এখনও পিছিয়ে আছে। তাদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন। একটা ভালো ফান্ড তৈরি করে পিছিয়ে থাকাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে সহযোগিতা করা উচিত।’
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে একটা প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে ফেলা উচিত। তাহলে কোন দেশের জন্য কোনটা বেশি প্রয়োজন তা সুনির্দিষ্ট করা যাবে এবং সবার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যাবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে চ্যাটাম হাউস কমিশন অন ইউনিভার্সাল হেলথ-এর কো-চেয়ার হেলেন ক্লার্ক।
অনুষ্ঠানটির দুটি অংশ ছিল। প্রথম অংশে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও বিশেষজ্ঞরা তাদের কাছে করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুষ্ঠানের এই অংশটি পরিচালনা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালকের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য বিষয়ক চ্যাটাম হাউস কমিশনের কমিশনার সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও ৩০ প্রকারের ওষুধ প্রদান, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ইনসুলিন প্রদান, নতুন নার্স ও চিকিৎসক নিয়োগ, স্বাস্থ্য সেবা-সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ, মাতৃত্বকালীন ও প্রসবকালীন সেবা প্রদান, মাতৃত্বকালীন ভাতা, জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো, উন্নত সরঞ্জাম ব্যবহার করে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি, বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ, হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন।
ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও, বিশ্বব্যাংক, সূচনা ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন এবং লন্ডনের চ্যাটাম হাউসের মতো বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য খাতে সফলতার উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘ছোট্ট একটা ভূখণ্ডে বিশাল জনগোষ্ঠী সামাল দেয়াটা খুবই কষ্টকর। তারপরও আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। শুধু স্বাস্থ্যসেবা নয়, সরকারের অন্য কাজগুলোও যাতে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে পৌঁছে সেদিকে সরকার বিশেষ দৃষ্টি দেয়।’
স্বাস্থ্য খাতে বাজেট-বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে প্রতি বছর বিরাট অংকের বরাদ্দ দেয়া হয়। জিডিপিতে ২ শতাংশ ধরলেও টাকার অংকে আমরা অনেক বেশি সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্য খাতের বিকাশে মেডিক্যাল সরঞ্জাম আমদানিতে ট্যাক্স কমানো এবং শিশুদের চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে কর মওকুফের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি। সেবা কার্যক্রম তদারকি করতে জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারেরও পুনরুল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
দারিদ্র্য বিমোচন করতে সরকারের নানা পদক্ষেপ এবং সফলতার চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে আমরা অনেক সফল। ২০০৬ সালেএদশে ৪১ শতাংশ দরিদ্র ছিল। এটি আমরা ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। চরম দারিদ্র্য ছিল ২৫ শতাংশের উপরে। সেটা ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এটাও থাকবে না। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে সবার জন্য এমন ব্যবস্থা নিচ্ছি যে কোনো মানুষই আর দরিদ্র থাকবে না।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ড. বর্ধন জং রানা, ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা এবং পরিষেবা সরবরাহ নিশ্চিতকরণ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা ও সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়। এই অংশে দুটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। একটি ‘ইমপ্রুভিং অ্যাকসেস টু অ্যাফোরডেবল অ্যান্ড কোয়ালিটি পিএইচসি ফর ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ’ এবং অন্যটি ‘হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং ফর এক্সিলারেটিং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ’ বিষয়ে।