বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আদালতে হিট স্ট্রোকে আইনজীবীর মৃত্যু, আলোচনায় ড্রেসকোড

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১১ মে, ২০২৩ ১৯:০০

হিট স্ট্রোকে আইনজীবী শফিকুলের মৃত্যুর ঘটনার পর গরমের সময় আদালতে আইনজীবীদের পরিধেয় পোশাক নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠক ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

প্রচণ্ড গরমের মধ্যে আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন শফিকুল আলম নামে ঢাকা বারের এক আইনজীবী। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মামলার শুনানি শেষে চেম্বারে ফেরার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

এই মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে দায়িত্ব পালনকালে আইনজীবীদের পরিধেয় পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তারা বলছেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও কালো রঙের কোট-টাই পরে দায়িত্ব পালন করাটা আইনজীবীদের জন্য ভীষণ কষ্টকর একটি বিষয়। এতে করে আইনজীবীদের যে কারও অসুস্থ হয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়।

এদিকে দেশব্যাপী চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আদালতে মামলার শুনানিকালে আইনজীবীদের পরিধেয় পোশাক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে শনিবার জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।

শফিকুল আলমের মৃত্যুর বর্ণনা দিয়ে ঢাকা বারের আইনজীবী মো. ওসমান গণি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমার কোলেই হিট স্ট্রোক করে মারা গেছেন। এর থেকে যন্ত্রণার, কষ্টের আর কী হতে পারে??

‘শুনানি শেষ করে মেট্রো বারের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এক আইনজীবী মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলেন। আমার সাথে আরেক আইনজীবী ধরে আছেন। আমি সাথে নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে মুখে-মাথায় হালকা পানি দিয়ে, মুখে হালকা চিনি দিয়ে অনেক কষ্টে তাকে রিকশায় উঠালাম। ঢাকা বারের হাসপাতালে আনলে ডাক্তার দেখে বললেন, হিট স্ট্রোক করেছেন।

'তখন আইনজীবী হালকা কথা বললেন। মনে হলো স্বাভাবিক হচ্ছেন। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- উনার ফাইল, গাউন ও কোট কোথায়? আমি বললাম, সব আছে; আপনি চিন্তা করবেন না। উনি বললেন, আমি জামিন করিয়েছি; বেইল বন্ড জমা দেওয়া হয়নি। আমি বললাম, সমস্যা নাই, দিতে পারবেন। আমি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললাম; ভাবলাম সুস্থ হয়ে গেছেন।’

ওই আইনজীবী আরও লিখেন, ‘ডাক্তার বললেন স্যালাইন খাওয়ান। গরমে এমন হয়েছে। আর আপনারা যে পোশাক পরেন!!! আমি স্যালাইন আনতে দিলাম এক ভাইকে। তখন উনি বললেন ওয়াশরুমে যাব। ডাক্তার ওয়াশরুমে নিয়ে যেতে বললে আমি অনেক কষ্টে সাথে আরেক আইনজীবীকে নিয়ে তাকে ওয়াশরুমে বসালাম। কিন্তু উনি প্যান্ট খুলতে পারছেন না। আমি নিজ হাতে জামাকাপড় সব খুললাম, লজ্জা-শরম সব বাদ দিয়ে ওনাকে বাথরুমে বসালাম। পেছনে শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছি।

'তারপর দেখি কথা বলছেন না, হাত-পা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তারপর ভেতরে আরেক আইনজীবীকে ডেকে আনলাম। উনি ধরে ছিলেন; আমি নিজ হাতে ওনাকে পরিষ্কার করলাম। কিন্তু তারপর উনার আর কোনো কথা নাই। আমি দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার দেখে বললেন, ওনার অবস্থা খারাপ। আপনারা তাড়াতাড়ি ন্যাশনালে নিন।’

‘আমি গামছা এনে কোনোরকমে লজ্জাস্থান ঢেকে রিকশায় করে ন্যাশনালে নিলাম। কিন্তু কর্মরত ডাক্তার দেখে বললেন, উনি আর নেই।

‘আমার শরীরটা কিছুক্ষণের জন্য হিম হয়ে গেল। এতো কষ্ট করেও বাঁচাতে পারলাম না! এর থেকে কষ্টের আমার জীবনে আর কিছু নেই।’

এদিকে হঠাৎ এই আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রচণ্ড গরমে আদালতে দায়িত্ব পালনকালে পরিধেয় পোশাক পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন ঢাকা বারের আইনজীবীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ড্রেসকোড পরিবর্তনের দাবি করে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন অনেক আইনজীবী।

আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ঢাকা বারের সভাপতি মিজানুর রহমান মামুন।

তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে আইনজীবীদের চিরায়ত ড্রেসকোড পরিবর্তনের জন্য এর মধ্যেই আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছি। আমরা প্রত্যাশা করছি, এই গরমে তিনি বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন।

‘এর আগে করোনার সময়ে আমাদের ড্রেসকোড পরিবর্তন করে আমরা শুনানি করেছি। এখন যে গরম পড়েছে, এই অবস্থায় আমাদের আবেদনে প্রধান বিচারপতি সাড়া দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।’

এ বিভাগের আরো খবর