ধানকাটার মৌসুমে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। দেশের শীর্ষ খাদ্য উৎপাদনকারী জেলা দিনাজপুরে মোখার কারণে ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছে লক্ষাধিক হেক্টর জমির ধান। টাকা দিয়েও ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাচ্ছেন না কৃষকরা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছর দিনাজপুরে মোট ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র ৬৯ হাজার ৫১৬ হেক্টর জমির ধান তুলতে সক্ষম হয়েছেন জেলার কৃষকরা। সে হিসেবে প্রায় ৪০ শতাংশ জমির ধান ঘরে তোলা হয়েছে। বাকি ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৪ হাজার ২৭৪ হেক্টর জমির ধান এখনও মাঠেই রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আঘাত হানলে জমিতে থাকা ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
৯ মে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী সৃষ্ট লঘুচাপটি আগামী ১২ থেকে ১৩ মে’র মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ধান পাকলেই সেই ধান কেটে নিতে বলা হয়েছে।
দিনাজপুরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে দোল খাচ্ছে পাকা ও আধা-পাকা সোনালী ধান। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে কৃষকরাও এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ফসলের মাঠে। কেউ শ্রমিক দিয়ে, আবার কেউ হারভেস্টার মেশিন দিয়ে জমির ধান কাটছেন কৃষকরা। তবে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তাদের মনে। কারণ টাকা দিয়েও ধানকাটা শ্রমিক পাচ্ছেন না তারা। সময়মতো ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারলে মোখার কারণে বিপুল পরিমাণ জমির ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বোরো ধানের পাশাপাশি ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলও ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা।
দিনাজপুর সদর উপজেলার কমলপুর গ্রামের কৃষক আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার তো বলতেছে ঘুর্ণিঝড় আসতেছে। আমাদেরকে তাড়াতাড়ি জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে হবে। কিন্তু এই অবস্থায় শ্রমিক ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড় তো ২/৩ দিনের মধ্যে চলে আসবে। এই সময়ের মধ্যে জমির ধান ঘরে তুলতে পারব কি না, জানি না।’
বিরল উপজেলার তেঘরা গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম বলেন, ‘জমির ধান এখনও ঠিকমত পাকেনি। এই অবস্থায় আবার ঘূর্ণিঝড় আসতেছে। এখন এই আধা-পাকা ধান কেটে নিতে হচ্ছে। আর কয়েকদিন ধানগুলো ক্ষেতে থাকলে পুরোপুরি পাকতো। এখন বাধ্য হয়ে জমির ধানগুলো কাটতেছি।’
বিরল উপজেলা সদরের কৃষক শামীম হোসেন বলেন, ‘ধান কাটার জন্য শ্রমিক ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না। তাই হারভেস্টার মেশিন দিয়ে আমার জমির ধান কাটছি। সামনে ঘূর্ণিঝড় আসছে, এতে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে তা কিছুই জানি না।’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরুজ্জামান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। বাইরে থেকে অনেক হাভেস্টার মেশিন এসেছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি, যদি জমির ৮০ শতাংশ ধান পেকে যায় তবে আর অপেক্ষা না করে যেন তা কেটে ফেলে।
‘প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ধান কাটছেন কৃষকরা। আশা করছি, ঝড় আসার আগেই জেলার ৬০ শতাংশ জমির ধান আমরা কেটে নিতে পারব। বাকি ৪০ শতাংশ ধান মাঠে থাকলেও তেমন একটা ক্ষতি হবে না।’
তাছাড়া ঝড় আসলেও দিনাজপুর পর্যন্ত তার প্রভাব বেশি পড়বে না বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।