বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিসিকের বর্ধিত এলাকা যেন অজপাড়া গাঁ

  •    
  • ১১ মে, ২০২৩ ১০:০৯

সিলেটের মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নতুন ওয়ার্ডগুলোর জন্য আমরা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রণয়ন করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দিই। এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েও অনুমোদিত হয়েছে।

বিস্তীর্ণ হাওরের মাঝখান দিয়ে গেছে কাঁচা সড়ক। এবড়ো-থেবড়ো সড়কের স্থানে স্থানে জমে আছে কাদাজল। হেঁটে চলাচলেরও অবস্থাও নেই। দেখে মনে হতে কোনো অজপাড়া গাঁয়ের সড়ক এটি, কিন্তু আদতে এই এলাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক)।

সিলেট সিটির ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের আলমপুর থেকে ছিটা গোটাটিকর গেছে সড়কটি। শেষের এলাকার বাসিন্দা পল্লি চিকিৎসক কৃষ্ণমণি বিশ্বাস আক্ষেপ করে বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে আমাদের এলাকা সিটি করপোরেশনের আওতায় এসেছে। তার বহু আগে থেকেই একেবারে নগরলাগোয়া এলাকা এটি, কিন্তু এখানে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।’

তিনি বলেন, ‘এলাকার একমাত্র সড়কটি পাকা হয়নি এতদিনেও। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে কাদা জমে। আর বর্ষা মৌসুমে তো পানিতে তলিয়ে যায়।‘নৌকা ছাড়া তখন চলাচলের আর কোনো বিকল্প থাকে না। কে বলবে এটি নগরের একটি এলাকা, অজপাড়া গাঁয়েও মনে হয় এখন এমন সড়ক নেই।’

এই আক্ষেপ কেবল কৃষ্ণমনি বিশ্বাসের নয় কিংবা এই চিত্র একটি পাড়া বা একটি সড়কের নয়। প্রায় একই একই রকম অবস্থা সিলেট সিটি করপোরেশনের নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের।

২৬ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার সিলেট সিটি করপোরেশনের আয়তন বাড়িয়ে ২০২১ সালে ১৭৯ বর্গকিলোমিটার হয়। এ সময় নগরের ২৭টি ওয়ার্ড বেড়ে ৪২টিতে পরিণত হয়। নগর বর্ধিতকরণের প্রায় দুই বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া।সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকেই বঞ্চিত এসব এলাকার ভোটাররা। ফলে নামে নগর হলেও সিলেট সিটির নতুন একটি ওয়ার্ড এখনও যেন একেকটি গ্রাম।

নতুন ১৫ ওয়ার্ডে চারটি আঞ্চলিক অফিস স্থাপন করলেও এখন পর্যন্ত এসব এলাকায় নেই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম।

নগর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্ধিত ওয়ার্ডের উন্নয়নে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি পাস হলে এসব ওয়ার্ডের চেহারা বদলে যাবে।

এমন পরিস্থিতিতে দুয়ারে এসেছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। নতুন এই ওয়ার্ডগুলোর ভোটাররা এবারের নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে।

গত রোববার ও সোমবার নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের অন্তত ৩০টি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি পাড়াই অপ্রশস্ত ও ভাঙাচোরা। কোথাও বা কাঁচা সড়ক। এ ছাড়া অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তূপ তো রয়েছেই। সুপেয় পানীয় জলের অভাব, জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রব, সড়কবাতি না থাকার মতো সমস্যাও আছে।

এসব সমস্যার কথা উল্লেখ করে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাহুবল এলাকার বাসিন্দা পার্থ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকেই বঞ্চিত। এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। ফলে বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে থাকে। তা ছাড়া ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে। অনেকটা নগরের মোড়কে গ্রামে রয়েছি আমরা।’

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সিলেট পৌরসভা থেকে ২০০১ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন গঠন হয়। তখন ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয় সিটি করপোরেশনকে। ২০১৫ সালের ২৩ জুন নগরীর বর্তমান আকারের প্রায় ছয় গুণ আয়তন বাড়ানোর একটি প্রস্তাব স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়।

২০২০ সালের ৯ আগস্ট সিসিকের আয়তন বাড়ানোর বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসন। ২০২১ সালের আগস্টে বর্ধিত এলাকাগুলোকে ওয়ার্ডে বিভক্ত করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার, খাদিমপাড়া, খাদিমনগর ও টুলটিকর ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বরইকান্দি, কুচাই ও তেতলি ইউনিয়ন সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের খাদিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা আজমল হোসেন বলেন, ‘আমরা কোনো সুবিধা তো পাই না। উল্টো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আগে জন্ম-মৃত্যুসনদ আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পেতাম, কিন্তু গত দুই বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদ নেই। আবার আমাদের ওয়ার্ডে কাউন্সিলরও নেই। ফলে কোনো জন্ম-মৃত্যু সনদ দেয়া হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজনেও এসব কেউ তুলতে পারছে না।’

এমন অবস্থায় সিটি নির্বাচনের প্রচারেও উঠে এসেছে নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নের বিষয়টি। মেয়র প্রার্থীদের প্রায় সবাই নতুন ওয়ার্ডের ভোটারদের অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। সিসিকের ৪২টি ওয়ার্ডে এবার মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। এর মধ্যে নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৫২৯ জন।

সিলেটে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী প্রতিটি ওয়ার্ডে সুষম উন্নয়ন করব। ওয়ার্ডভিত্তিক আলাদা উন্নয়ন পরিকল্পনা করব। ফলে কোনো ওয়ার্ডই উন্নয়ন বঞ্চিত থাকবে না।’

এ বিষয়ে সিলেটের মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নতুন ওয়ার্ডগুলোর জন্য আমরা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রণয়ন করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দিই। এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েও অনুমোদিত হয়েছে।

‘এখন একনেকে ওঠার অপেক্ষায় আছে। এই প্রকল্পটি পাস হলে বর্ধিত এলাকাগুলো আর উন্নয়নবঞ্চিত থাকবে না।’

বর্ধিত এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রয়োজন উল্লেখ করে লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান রাজন দাস বলেন, ‘বর্ধিত এলাকাগুলোতে এখনও সেইভাবে নগরায়ন হয়নি। ফলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ওই এলাকাগুলোতে যাতে যত্রতত্র বহুতল ভবন গড়ে না ওঠে। খোলা মাঠ, জলাশয় যাতে ভরাট করা না হয়।

‘প্রশস্ত সড়ক ও পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকাও জরুরি। বহুতল ভবন নির্মাণে যাতে বিল্ডিং কোড মানা হয়, সেই বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সব মিলিয়ে উন্নয়ন করতে হবে পরিকল্পিতভাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর