বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২২ বছর গেছে সমীক্ষায়, প্রাণ ফেরেনি করতোয়ায়

বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘করতোয়া নদী বগুড়ার প্রাণ। দখল-দূষণে নদীর প্রাণবৈচিত্র্য প্রায় নিঃশেষ। নদীর সীমানা নির্ধারণ করে এই অংশটি ওয়াকওয়ে করে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী, করতোয়া আবার প্রাণ ফিরে পাবে।’

বগুড়া শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর দূষণ রোধ করে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক এবং সৌন্দর্যবর্ধনে নেয়া পরিকল্পনা ২২ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি।

এই দীর্ঘ সময়ে দখল-দূষণে নদীটি প্রাণের সতেজতা আরও হারিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে সমীক্ষার কথা বলা হলেও মূল কাজ শুরু হয়নি।

এখনো সমীক্ষা চলছে জানিয়ে বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে সমীক্ষা শেষ হওয়ার কথা। এরপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

গোবিন্দগঞ্জের খুলসির দক্ষিণে কাটাখালি সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ময়লা ফেলে নদীকে ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে।

এখানের কিছু অংশে স্থানীয় বাসিন্দারা না বললে করতোয়া নদীকে নদী হিসেবে চেনা কঠিন। ক্ষেত ও সড়কের মাঝ দিয়ে নালার মতো বয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে করতোয়া।

আরও করুণ অবস্থা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাজার এলাকায়। বগুড়া শহরের চেলোপাড়া ফতেহ আলী বাজারের রেল সেতুর আশপাশে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এতে চারপাশ ভরাট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ভরাট হওয়া জমিতে দোকান বসিয়ে বেচাকেনা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সম্প্রতি বগুড়া জেলা প্রশাসন করতোয়া নদীতে ৩৮টি অবৈধ দখলের তালিকা তৈরি করে। তালিকাভুক্ত দখলদারদের উচ্ছেদে বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করতে পারেনি প্রশাসন। এ ছাড়া অভিযান স্থগিতের সময় নতুন করে নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।

প্রকল্পের শুরু যখন থেকে

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ২০০১ সালে ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে করতোয়া নদীর উন্নয়নে প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়। করতোয়া নদীর দূষণরোধ এবং পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রেখে শহরটির সৌন্দর্যবর্ধনই মূল লক্ষ্য ছিল।

প্রথম ধাপে ২০০২ সালে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর চেলোপাড়া থেকে নাটাইপাড়া অংশে তীর সংরক্ষণে মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। সড়কের পাশে গাছ ও বাতি স্থাপন করা হয়। সেখানেই কাজের সমাপ্তি ঘটে।

২০০৬ সালে করতোয়াকে নিয়ে আবার ১৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব দেয়া হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও পৌরসভা যৌথভাবে নদী উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়।

ওই প্রকল্পে করতোয়া নদীর পূর্ব তীরে ১০ দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং পশ্চিম তীরে ৯ দশমিক ১৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া এর আওতায় সাড়ে ৪৭ কিলোমিটার পুনঃখনন, বিভিন্ন বাঁকে পানিপ্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, এ জন্য নদী সোজা করতে এক কিলোমিটার খনন, শহরতলীর মাদলা এলাকায় একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ, নদীর ঢালে সাড়ে তিন কিলোমিটার সিসি ব্লক, সাড়ে তিন কিলোমিটার ঢাল উন্নয়ন, শহরের দুটি স্থানে নান্দনিক ঘাট, চারটি জলকপাট, পাশের সুবিল খালে ছয়টি বক্স কালভার্ট এবং ৪০০টি খুঁটি নির্মাণ করার প্রস্তাব ছিল।

দুই বছরের সমীক্ষা শেষে ২০০৮ সালে প্রকল্প প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।

কয়েক বছর স্থগিত থাকার পর ২০১১ সালে করতোয়াকে বাঁচাতে ফের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে করতোয়া নদী উন্নয়ন প্রকল্প শিরোনামে পাউবোর উদ্যোগটি সামগ্রিক ছিল না।

এরপর ২০১৮ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকল্প প্রস্তাব দেন তৎকালীন বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ। এতে করতোয়াসহ বগুড়ার গজারিয়া, ইছামতি নদী সংস্কারে ২ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়।

গোবিন্দগঞ্জের খুলসি থেকে বগুড়ার শেরপুর পর্যন্ত করতোয়ার ১১৯ কিলোমিটার নদী উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় পৌনে ১২শ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটিও পরিকল্পনা কমিশনে গিয়ে থমকে যায়।

বর্তমানে আবারও ওই প্রকল্পটি সামনে আনা হয়। এবার ব্যয় বাড়িয়ে ২ হাজার ৯৪২ কোটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

নতুন প্রকল্পে যা রয়েছে

নতুন করে যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সমীক্ষা চলছে তার আওতায় করতোয়া নদীর দূষণ বন্ধ, শহরের যানজট নিরসনে সড়ক নির্মাণ, নদীর শিবগঞ্জের উত্তরের সীমানা থেকে শেরপুরের দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত ১২৩ কিলোমিটার এলাকা খনন, ৩১ কিলোমিটার সুবিল খাল খনন, ইছামতী নদী ও গজারিয়া খালের ৭৫ কিলোমিটার খনন, নদীর দুই পাড়ের ২৭ কিলোমিটার এলাকায় ২০ ফুট সড়ক, ছয় ফুট ওয়াকওয়ে নির্মাণ, নালা, পানি নিয়ন্ত্রণে তিনটি অবকাঠামো নির্মাণ, নদীর দুই পাড়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ, পানির ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের অধীনে ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।

পাউবো, বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, করতোয়া নদী উন্নয়ন প্রকল্পের সমীক্ষা যাচাই চলছে। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেল (আইডব্লিউএম), বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র (সিবিএস) ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন যৌথভাবে এই সমীক্ষা করছে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে সমীক্ষা শেষ হওয়ার কথা।

তিনি বলেন, ‘করতোয়া নদী নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ চলছে। ২০১৯ সালের পর এটি বেশি জোরদার হয়। প্রকল্পটির সমীক্ষা করছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। এখানে সুখবর হচ্ছে, প্রস্তাবটি একনেকের সবুজ পাতাভুক্ত হয়ে আছে। মানে প্রথম ধাপ সম্পন্ন। সমীক্ষায় কমপোনেন্টগুলো (উপাদান) যাচাই শেষ হলে প্রকল্পটি পাস হয়ে যাবে।’

২ মে বগুড়ার সার্কিট হাউজে এক কর্মশালায় বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘করতোয়া নদী বগুড়ার প্রাণ। দখল-দূষণে নদীর প্রাণবৈচিত্র্য প্রায় নিঃশেষ। নদীর সীমানা নির্ধারণ করে এই অংশটি ওয়াকওয়ে করে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী, করতোয়া আবার প্রাণ ফিরে পাবে।’

ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান। তিনি বলেন, ‘করতোয়া নদীকে বাঁচাতে আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, তার সবটুকুই করা হবে। এবার প্রকল্পটি পাশে দেরি হবে না।’

তবে দীর্ঘ বছর পর প্রকল্প বাস্তবায়ন করে করতোয়া নদী রক্ষা হবে কি না, এমন সংশয় ব্যক্ত করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন।

তিনি বলেন, ‘করতোয়া নদীর সেই ছোট্ট ঘা গত ২০-২২ বছরে প্রকট আকারে পরিণত হয়েছে। সময়ের কাজ সময়ে না করলে সেখানে ভুক্তভোগী হতে হয় নাগরিকদের।

এত বড় ব্যয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখানে অবশ্যই রাষ্ট্রের যথাযথ নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করি।’

এ বিভাগের আরো খবর