পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন আকতারুল ইসলাম আবির। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে তাকে আটক করা হয়। কারাভোগ শেষে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসার পর ধরা পড়েছেন এই অপকর্মের হোতা।
আবির পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন ‘বি’ ইউনিটের (মানবিক বিভাগ) পরীক্ষার্থী সেজান মাহফুজের হয়ে। আর তাকে প্রক্সি হিসেবে নিযুক্ত করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান রাব্বি।
মূল পরীক্ষার্থী সেজান মাহফুজের সঙ্গে ৩ লাখ টাকার চুক্তিতে প্রক্সি পরীক্ষার্থী পাঠিয়েছিলেন রাব্বি। অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাসহ সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাতেও জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
প্রক্সি পরীক্ষার্থী আবিরকে হল থেকে আটক করার পর ২০২২ সালের ১৩ আগস্ট রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই মামলায় আবির বর্তমানে জামিনে আছেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান এই অপকর্মের নেপথ্যের কারিগর।
পরবর্তীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই মামলার তদন্তভার দেয় পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট মামলাটির তদন্ত করে ৩ মে ধানমণ্ডি এলাকা থেকে রাকিবুল হাসান রাব্বিকে গ্রেপ্তার করে। তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) পরিদর্শক গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাকিবুল হাসান রাব্বিকে সোমবার একদিনের জন্য রিমান্ডে আনা হয়। তিনি ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।’
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, রাকিবুল হাসান রাব্বি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্টে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রক্সি পরীক্ষা দিতে আসা আকতারুল ইসলাম আবিরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। রাব্বি কয়েক বছর ধরেই ভর্তি ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতি করে আসছেন।
রাব্বির মোবাইল ফোন ও ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বিশ্লেষণ করে এই চক্রে আরও কিছু ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। রাব্বির মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষা করে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, রাকিবুল হাসান রাব্বি ইতোপূর্বে বিভিন্ন পরীক্ষার আগে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে কাজ করে দেয়ার চুক্তি করেছেন। প্রক্সি পরীক্ষার্থীর মতো এমন বেশকিছু কাজ তিনি করেও দিয়েছেন। সেসব তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে।
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষার্থী সেজান মাহফুজের সঙ্গে রাকিবুল হাসানের ৩ লাখ টাকার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী সেজানের পরিবর্তে পরীক্ষার হলে পাঠানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা আকতারুল ইসলাম আবিরকে। কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রেই তিনি ধরা পড়ে যান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা সন্দেহভাজন হিসেবে আবিরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
রাকিবুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সারোয়ার জাহান বলেন, ‘তিনি বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীদের সঙ্গে লিখিত বা মৌখিত পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে পাস করিয়ে দেয়ার চুক্তিতে কাজ করতেন।
‘এসব চুক্তির অংশ হিসেবে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি পরীক্ষার্থীদের পাঠাতেন রাব্বি। তিনি অবৈধ লেনদেনের জন্য বিভিন্নজনের ব্যাংক একাউন্ট, বিকাশ ও এসএ পরিবহনের মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ব্যবহার করতেন।’