ঢাকার ‘পোস্টার বয়’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠা হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে ট্রলের শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে ট্রল করা ব্যক্তিদের সমালোচনা করেছেন তিনি।
গুচি ব্যান্ডের বেল্ট পরে তার দাম ও কতদিন ধরে তা ব্যবহার করছেন তা জানিয়ে সোমবার একটি পোস্ট দিয়েছিলেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ও জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। এরপরই তার ওই পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়। ফেসবুকে তার পোস্টটি শেয়ার করে অনেকেই লেখেন, তিন কোটি টাকার বেল্ট পরছেন হাজী মিলন।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হয়ে দুই বার হেরে যাওয়া এই নেতা ওই পোস্টে লিখেছিলেন, ‘আমার এই গুচি ব্যান্ডের বেল্টটি ১৯৮৯ সালে সাউথ কোরিয়া থেকে খরিদ করেছিলাম, ৯ হাজার টাকায়। বেল্টটি আগের মতোই চকচকে। প্রায় ৩৪ বছর আগে আমি এই টাকায় কামরাঙ্গীর চরে ছয় কাঠা জমি কিনতে পারতাম, এখন মূল্য তিন কোটি টাকা।’
ট্রলের শিকার হওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে ফেসবুক লাইভে এসে সাইফুদ্দিন মিলন বলেন, ‘আমি একটি পোস্ট দিয়েছিলাম আমার বেল্ট গুচি ব্যান্ডের। সাউথ কোরিয়া থেকে ১৯৮৯ সালে ৩৪ বছর আগে খরিদ করেছিলাম। ওই সময় ৯ হাজার টাকায় খরিদ করেছিলাম। ওই সময় কামরাঙ্গীর চরে এ টাকায় একটি জমি কিনতে পারতাম।
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি বেলটির জায়গায় যদি একটি জায়গা কিনতাম তাহলে ৩ কোটি টাকা দাম হতে পারতো। আমার বক্তব্যটি কিন্তু বেল্টের দাম তিন কোটি টাকা নয়।’
জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, ‘দেশের অনেক মানুষ আছে যাদের কোনো কাজকর্ম নাই, তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ মানুষও না। মানুষকে নিয়ে ট্রল করতে খুব বেশি পছন্দ করে। তার ব্যক্তিগত কী যোগ্যতা এটা সে একবারও চিন্তা করে না।’
তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্য ওই সময় আমি একটি বেল্ট কিনেছি। ওই বেল্টের তখনকার দাম ৯ হাজার টাকা। আমি কোনো সেলিব্রেট না। যদি সেলিব্রেট হতাম, যদি বেল্টটি বিলগেটস, মোহাম্মদ আলী বা নেলসন ম্যান্ডেলার হতো, যত ক্ষুদ্র জিনিস হতো তা হলেও অনেক বেশি দাম হতো।’
হাজী মিলন বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষ। স্বাভাবকিভাবে ওই ৯ হাজার টাকার বেল্ট এখন ৯ টাকায়ও বিক্রি হবে না। আমার বক্তব্য ছিল এরকম। আমার বেল্টটির বকলেস হয়তো সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকায় বিক্রি হতে পারে। কিন্তু বক্তব্যটি না বুঝে বেল্টটির দাম তিন কোটি টাকা বানিয়ে ফেলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বংলাদেশে গত ৪০ বছরে জায়গার দাম এত বৃদ্ধি হয়েছে। আমি আসলে যে বক্তব্য ছিল, মূলত এসব মিন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মানুষ না বুঝে, মানুষের মধ্যে কতটা শিক্ষার অভাব কতটা অজ্ঞ মানুষ। সাধারণ বেল্টটিকে না বুঝেই তিন কোটি বানিয়ে ফেলল তারা।
‘এটা তারা কতটা শিক্ষা তাদের আছে, ভাবতে অবাক লাগে। এক শ্রেণির মানুষ আছে, কাজকর্ম নাই সমালোচনা নিয়ে বসে থাকে। এ জন্য আসলে সমাজের অনেক সেলিব্রেট অনেক মানুষ ফেসবুক ইউজ করে না তারা পোস্ট দেয় না।’
হাজী সেলিম এক পর্যায়ে বলেন, ‘তোমার কাজকর্ম তুমি দেখো। মানুষকে যে ট্রল করো তাতে তোমার কী লাভ। ট্রল করতে করতে তুমি সব হারিয়ে ফেলেছো।
‘১৭ বছর বয়সে আমি ফুটবল খেলেছি। পৃথিবীর বহু দেশে আমি ভ্রমণ করেছি। রাজনৈতি দলের অনেক বড় দলে আধিকারিক ছিলাম। আমার সম্বন্ধে না বুঝে অনেক মানুষ ট্রল করেন। সেটা আমার কিছু আসে যায় না। আপনারাই ট্রল হয়ে যাচ্ছেন।’
ঢাকা শহরের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই দেখা যায় হাজী মিলনের পোস্টার। জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে শুরু করে নানান উপলক্ষে ছাপানো পোস্টারে দেখা যায় তার হাস্যোজ্জ্বল মুখ। মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানো নিয়েও তিনি আলোচনায় আসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
নিউজবাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে গত ৩ জানুয়ারি তিনি বলেছিলেন, ‘রাস্তায় বের হলেই আমারে দেখা যায়, এই জন্য অন্যদের খারাপ লাগে। আমার ছবি কেন রাস্তায় দেখা যায়, তাদের ছবি কেন দেখা যায় না– এ জন্যে তাদের খারাপ লাগে। ঢাকা শহরে দেড়-দুই কোটি মানুষ থাকে। এর মধ্যে দুই-তিন শ মানুষ সমালোচনা করে। কারণ তাদের খারাপ লাগে, আর বাকি মানুষ প্রশংসা করে। এই দুই-তিন শ লোকের ছবিসহ পোস্টার লাগায় দেন, দেখবেন তাদের কাছেও ভালো লাগবে।’
হাজী মিলন ঢাকা দক্ষিণে রাজনীতি করলেও উত্তর ঢাকাতেও তার পোস্টার ও প্রচারণা দেখা যায়। গত ২০ বছর ধরে নিজের পোস্টার লাগিয়ে আসছেন বলেন জানান হাজী সাইফুদ্দিন।
সাক্ষাৎকারে তিনি তখন আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরের রাস্তায় বের হলেই আমাকে দেখা যায়, কারণ আমি উঁচুতে পোস্টার লাগাই। নিচে পোস্টার লাগালে তো অন্যরা আমার পোস্টারের উপর পোস্টার মাইরা দিব। তখন তো কেউ আমারে দেখতে পারবে না।’