প্রথমে পাঁচ দিনের ছুটি। তারপর ৩০ দিনের ছুটি নিয়ে গিয়েছিলেন বিদেশ ভ্রমণে। সেই ছুটি শেষ হলে আবারও ত্রিশ দিনের জন্য ছুটি বাড়িয়ে নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সানজিদা আক্তার। কিন্তু বর্ধিত সেই ছুটি শেষ হয়ে তিন মাস পার হলেও এখনও বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা জানিয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর প্রথমে ১ থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটির আবেদন করেন সানজিদা আক্তার। ছুটি অনুমোদন হয়। ৭ জানুয়ারি বিদেশ ভ্রমণের জন্য ৮ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবারও ৩০ দিনের ছুটির আবেদন করেন তিনি। সেটির অনুমোদন নিয়ে তিনি চলে যান ফ্রান্সে তার স্বামীর কাছে।
তবে সেই ছুটি অতিবাহিত হলেও বিদ্যালয়ে যোগদান করেননি শিক্ষিকা সানজিদা আক্তার। উল্টো প্রভাব খাটিয়ে ফ্রান্স থেকে দূতাবাসের মাধ্যমে ৭ মে পর্যন্ত আরও ৩০ দিনের জন্য ছুটি বর্ধিত করেন শিক্ষিকা। সেই ছুটির সময়সীমা শেষ হয়ে সোমবার (৮ মে) বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।
এতে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান অভিভাবক ও শিক্ষকরা।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বিদ্যাকুট পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই প্রভাব খাটিয়ে বছরের বেশির ভাগ সময় স্বামীর সঙ্গে ফ্রান্সে থাকেন শিক্ষিকা সানজিদা আক্তার। তাছাড়া ২০২১ সালে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার জন্য কৌশলে ছুটি মঞ্জুর করিয়ে নেন তিনি।
ওই বিদ্যালয়ে সাড়ে ৪ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৭ জন। শিক্ষক-স্বল্পতায় পাঠদানে হিমশিম খাওয়া বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষিকা সানজিদা আক্তারের প্রবাসে অবস্থান যেন গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া।
এ ব্যাপারে বিদ্যাকুট পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘৭ মে সহকারী শিক্ষিকা সানজিদা আক্তারের ছুটির শেষ দিন ছিল। সোমবার (৮ মে) তার বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু তিনি অনুপস্থিত। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সেখান থেকে বলা হয়েছে হাজিরা খাতায় ওনাকে অনুপস্থিত রাখার জন্য।
‘তাছাড়া যেহেতু বিদেশ থেকে দূতাবাসের মাধ্যমে ই-মেইল করতে হয়, সেটি আসতেও সময় লাগে। তাই আমরা আরও দু’দিন দেখব। তারপর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অনুপস্থিতির রিপোর্ট দেব। তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সহকারী শিক্ষিকা সানজিদা আক্তারের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।’
ওই সহকারী শিক্ষিকা প্রতিদিন ১২টি ক্লাস নিতেন জানিয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের আরেকজন শিক্ষক ট্রেনিংয়ে আছেন। এ অবস্থায় শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল বলেন, ‘প্রবাসে থাকার কারণে বিদ্যাকুট পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সানজিদা আক্তার ৭ মে পর্যন্ত ছুটি কাটিয়েছেন। তবে এখন তার কোনো বৈধ ছুটি বা বাড়তি ছুটি চাওয়ার সুযোগ নেই।
‘ছুটি শেষ হওয়ার পর থেকে তিনি যদি একদিনও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন, সেজন্য ওনাকে জবাবদিহি করতে হবে।’
কোনোরকম অনুমতি ছাড়া বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।