ধর্ষণের মামলায় খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) ড. শহীদুর রহমান খানকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
সোমবার বিকেল ৩টায় খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক আব্দুস ছালাম এ আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ আহম্মেদ বলেন, ‘ভিসি ড. শহীদুর রহমান খান আজ (সোমবার) জামিনের আবেদন করেছিলেন। তবে বিচারক তা নামঞ্জুর করেছেন।’
ড. শহীদুর রহমান খান কারাগারে গেলেও আগের দিন রোববার এই মামলায় স্থায়ী জামিন পেয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রার খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার।
১৩ মার্চ খুকৃবির সাবেক উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী কর্মী। তাতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তির সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
আদালতের আদেশে পরদিন মামলার এজাহার গ্রহণ করে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানা। তবে ওই মামলায় তারা এতদিন উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে ছিলেন। রোববার তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হয়।
আদালত সূত্র জানায়, শহীদুর রহমান উপাচার্য থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অফিসের পঞ্চম তলায় বসবাস করতেন। সেখানে খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ওই নারী কর্মীর মাধ্যমে উপাচার্যের খাবারের ব্যবস্থা করে দেন রেজিস্ট্রার। সে অনুযায়ী প্রতিদিন শহীদুর রহমানের কাছে খাবার পৌঁছে দিতেন ওই নারী কর্মী।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, খাবার সরবরাহ করতে গেলে তাকে অনেকবার অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন শহীদুর রহমান। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় খাবার দিতে গেলে পরিকল্পিতভাবে রেজিস্ট্রারের সহযোগিতায় তাকে ধর্ষণ করেন শহীদুর রহমান।
পরে রেজিস্ট্রার ওই নারীকে বলেন, ‘আজকের ঘটনা কাউকে বললে তোমার চাকরি থাকবে না। স্যারকে বলে স্যারের সঙ্গে তোমার বিয়ে পড়িয়ে দেব। তুমি তোমার স্বামীকে তালাক দিয়ে দাও।’
ভুক্তভোগীর দাবি, পরে তিনি চাকরির কথা বিবেচনা করে ও লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে স্বামীকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর থেকে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে মেলামেশা করতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে শহীদুর রহমানের উপাচার্য পদের মেয়াদ শেষ হলে তিনি বদলি হয়ে যান এবং ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
আদালতে উপস্থাপিত আবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি শহীদুর রহমান খুলনায় এলে ওই নারী তার সঙ্গে দেখা করেন। এক পর্যায়ে শহীদুর রহমানের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে বিয়ের আকুতি জানান। কিন্তু এতে রাজি হননি শহীদুর রহমান।
পরে ভুক্তভোগী স্বজনদের বিষয়টি জানিয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গ্রহণ না করে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হলে বিচারক থানাকে এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কিপার হিসেবে চাকরি করতেন। পরে তাকে উপাচার্য শহীদুর রহমানের ব্যক্তিগত সরকারী (পিএ) হিসেবে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শহীদুর রহমান উপাচার্য পদে ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তার মেয়াদ শেষ করেন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহে নিজের বাড়িতে থাকেন।