সিলেটে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই প্রচারে নেমে পড়েছেন তারা। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিধান অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। রোববার দুপুরে নগরের করিমউল্লাহ মার্কেটে তার সমর্থনে প্রচারপত্র বিলি করে মহানগর যুবলীগ।
প্রচারপত্রে লেখা রয়েছে- ‘সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।’ প্রচারপত্রে আনোয়ারুজ্জামান ও নৌকা প্রতীকের ছবি যুক্ত রয়েছে।
বাস্তবতা হলো, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এখন পর্যন্ত মনোনয়নপত্রই সংগ্রহ করেননি। আনোয়ারুজ্জামান। অথচ তার ও দলীয় প্রতীকের ছবিসহ প্রচারপত্র বিলি শুরু হয়ে গেছে। প্রতিদিন গণসংযোগও চালাচ্ছেন তিনি।
শুক্রবার সিটি করপোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড়গুল জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন আরিফুল হক চৌধুরী। ছবি: নিউজবাংলা
প্রচারে আনোয়ারুজ্জামান এগিয়ে থাকলেও বসে নেই অন্যরাও। মতবিনিময়, কুশল বিনিময়, জুমার নামাজে অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিজ নিজ ওয়ার্ডে প্রতিদিনই মতবিনিময় সভা, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সিটি করপোরেশন (নির্বাচনি আচরণ) বিধিমালায় প্রতীক পাওয়ার আগে প্রচার শুরুতে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি কেউই তা মানছেন না। এমনকি প্রতীক ব্যবহার করেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন প্রার্থীরা। এটি আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রত্যেক প্রার্থীরই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশনকেও এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।’
নগরের সোবহানীঘাটে শনিবার কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের নৌকার ছবি সংবলিত প্রচারপত্র বিলি করতে দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে রোববার আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করিনি। কোনো পোস্টার-লিফলেটও তৈরি করিনি। তবে আমার সমর্থনে কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে লিফলেট-পোস্টার তৈরি করেছেন, যা আমার চোখেও পড়েছে। এটি করা ঠিক হয়নি। আমি সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক করব। আমাদের অবশ্যই নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে হবে।’
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী শনিবার সোবহানীঘাটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা নৌকার ছবি সংবলিত প্রচারপত্র বিলি করেন। ছবি: নিউজবাংলা
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। আরিফ এখনও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি। ২০ মে নগরে সমাবেশ করে এ ব্যাপারে ঘোষণা দেয়ার কথা রয়েছে। তবে প্রার্থিতা নিশ্চিত না করলেও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কুশল বিনিময়ের নামে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে বেড়াচ্ছেন আরিফ।
শুক্রবার সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকা ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড়গুল জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন আরিফুল হক। এরপর স্থানীয়দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। এ সময় স্থানীয়রা তার কাছে ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন মেয়র।
এ প্রসঙ্গে আরিফুল হক বলেন, ‘আমি প্রার্থী হবো কী না তা এখনও নিশ্চিত নয়। তাই প্রচার চালানোর তো প্রশ্নই আসে না। প্রার্থী হবো কি না এ ব্যাপারে ভোটারদের মতামত জানতেই আমি নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাচ্ছি। কিন্তু কোথাও ভোট চাচ্ছি না।’
আরিফ অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী কোনো নিয়মনীতিই মানছেন না। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন তিনি। প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করছে।’
এছাড়া সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের আবদুল্লাহ নগরের ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর সোমবার সিলেটে আসবেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী বাবুল। বিমানবন্দরে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে সংবর্ধনা দেবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া নগরের ৪২টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরাও আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। বিভিন্ন পাড়া-মল্লার সড়ক ছেয়ে আছে তাদের ব্যানার, ফেস্টুন আর প্লাকার্ডে। এছাড়া পাড়ায় পাড়ায় সভার আয়োজন করে ভোট চাইছেন তারা। নানা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।
শনিবার রাতে নগরের খরাদিপাড়ায় পরামর্শ সভার আয়োজন করেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মিঠু তালুকদার।
সভায় মিঠু বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে ছাত্র ও যুবসমাজ এলাকার উন্নয়নে যোগ্য প্রতিনিধি বাছাই করবে। আমি জনগণের মনোনীত প্রার্থী। তাই এই ওয়ার্ডের জনগণই হলো আমার শক্তি ও প্রেরণা।
‘জনগণ পরিবর্তন চায়। পরিবর্তনই উন্নয়ন। আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। আমি মাদকমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর ও আধুনিক ওয়ার্ড গড়ে তুলব।’
এ বিষয়ে সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচার চালানোর কোনো সুযোগ নেই। যারা এমনটি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নগরে লাগানো প্রার্থীদের প্রচারসামগ্রী অপসারণে শনিবার অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। ২৩ মে পর্যন্ত এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১ জুন। এরপর শুরু হবে প্রচার, যা চলবে ভোট গ্রহণের আগের দিন পর্যন্ত।