খুলনার কয়রায় উত্তরচক কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক অধ্যাপককে কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী ড. মো. নজরুল ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক। আর অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মো. আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ। তিনি মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের মহারাজপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের বাড়িসংলগ্ন রাস্তায় প্রথমে হামলা এবং পরে তার বাড়ির একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয় ড. নজরুল ইসলামের ওপর।
গুরুতর আহত অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর সন্ধ্যায় তাকে ঢাকার উদ্দেশে পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগী অধ্যাপক নজরুল জানান, শুক্রবার কয়রা উত্তরচক কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। তিনি সেখানে নিয়োগবিধি অনুযায়ী ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যক্ষ পদে লিখিত পরীক্ষায় কেউ পাস করেনি। তারপরও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ তার পছন্দের প্রার্থী মাদ্রাসাটির উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমানকে নিয়োগ দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। এ সময় অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিধি মোতাবেক নিয়োগ পরীক্ষার ফল অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে চান।
এরপর তিনি নিয়োগ বোর্ডের ডিজির প্রতিনিধির গাড়িতে করে ফেরার পথে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে পৌঁছলে তাদের গাড়ি থামিয়ে প্রথমে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ ওই শিক্ষককে চড় মারেন এবং তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। এ সময় ওই অধ্যাপককে ফেলে রেখে ডিজির প্রতিনিধি চেয়ারম্যানের কথামতো নিয়োগের কাগজে স্বাক্ষর করে চলে যান।
কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক রাজি না হওয়ায় চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা ২০-২৫ জন লোক তাকে কিল-ঘুষি মারতে মারতে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামায়। এরপর চেয়ারম্যানের বাড়ির একটি কক্ষে আটকে রেখে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালানো হয়। তারা জোরপূর্বক নিয়োগের কাগজে তার স্বাক্ষরও নিয়ে নেয়।
এ বিষয়ে জানতে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে এর আগে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হামলা বা নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। নিয়োগ পরীক্ষা শেষে তিনি আমার বাড়িতে নাশকতা করতে এসেছিলেন। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা ঘটনা শুনেছি। অধ্যাপক নজরুল এখন ঢাকায় ফেরার পথে আছেন। তার ওপর হামলার বিষয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিএমএস দোহা বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি শুনেছি। হামলার শিকার ওই শিক্ষক দ্রুতই অভিযোগ দায়ের করবেন। অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’