বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুই শিশুকে কৃষি’র ডিজি ও পরিবারের অমানুষিক ‘নির্যাতন’

  • প্রতিবেদক, খুলনা   
  • ৬ মে, ২০২৩ ২০:২৮

নির্যাতনের শিকার শিশু দুটির বাবা বলেন, ‘আমার দুই ছেলের ওপর প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে টানা নির্যাতন চালিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ও তার পরিবারের সদস্যরা। এক ছেলের গোড়ালির রগ কাটার চেষ্টা ও ঘাড়ে চাকুর আঘাত, কব্জি, কান ও মাথার পেছনে কারেন্টের শক দেয়া হয়েছে। অন্য ছেলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি মারা হয়েছে।’

বৈদ্যুতিক শক দিয়ে দুই শিশু নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বাদল চন্দ্র বিশ্বাসসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার দুই শিশুর মধ্যে এক শিশু গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শিশুর পরিবারে সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর বয়রা এলাকায় খুলনা মহিলা কলেজের সামনে কর ভবনের পশ্চিম পাশে ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাসের একটি বাড়ি রয়েছে। ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন দুই শিশুর বোন। তাদের বাবা-মা বসবাস করেন পিরোজপুরের ইন্দরকানি উপজেলায়। মাঝে মাঝে পরিবারের সঙ্গে ওই দুই শিশু ইন্দরকানি থেকে খুলনায় বোনের বাসায় আসতো।

তাদের বাবা নেছার উদ্দীন হাওলাদার ইন্দরকানি উপজেলার পশ্চিম বালিপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মা নাছিমা আক্তারও একই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।

নেছার উদ্দীন হাওলাদার বলেন, ‘আমার দুই ছেলেকে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে একটানা নির্যাতন চালিয়েছেন ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ও তার পরিবারের সদস্যরা। এক ছেলের পায়ের গোড়ালির রগ কাটার চেষ্টা ও ঘাড়ে চাকুর আঘাত, ডান হাতের কব্জি, ডান কানের গোড়া ও মাথার পেছনে কারেন্টের শক দেয়া হয়েছে।

‘অন্য ছেলের পিঠের ডান পাশে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি মারা হয়েছে। নির্যাতন করে তাদের মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিয়ে ভিডিও করা হয়েছে। একইসঙ্গে শিশু দুটির কাছ থেকে কাগজে লিখিত নিয়েছে ডিজি বাদল চন্দ্র। আমার সন্তানদের বয়স মাত্র ১২ বছর। এই বয়সে এমন ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে ওরা ভীতসম্ভ্রন্ত হয়ে পড়েছে।’

এ প্রসঙ্গে রোববার দুপুরে ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ও তার ছেলে শুভ বিশ্বাসের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সোনাডাঙ্গা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নেছার উদ্দীন হাওলাদার। অভিযোগপত্রে নাম উল্লেখ না করলেও ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাসের স্ত্রী ও দুই শ্যালিকাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক। তিনি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ঘটনার সময় আমি ঘরে ছিলাম না। আমার পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের কাছে টাকটা ফেরত চাওয়া হয়েছে। তবে বৈদ্যুতিক শক দেয়ার কথাটা সত্য নয়।

ঘটনা প্রসঙ্গে নেছার উদ্দীন হাওলাদার বলেন, ‘লেখাপড়ার জন্য আমার মেয়ে ইসরাত জাহান ত্বন্নী খুলনার বয়রাতে ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাসের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। ডিজির পরিবারের সদস্যরা এখানে থাকেন না। তাদের ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়ার জন্য তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। সেই ফ্ল্যাট দেখানোর জন্য চাবি আমার মেয়ের কাছে রেখে দিয়েছেন। মাঝেমধ্যে তিনি এখানে আসেন। অনেক সময় তার স্বজনরা এসেও রাতযাপন করেন।’

তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে যমজ দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে আমি খুলনার ওই বাড়িতে এসেছিলাম। কয়েকদিন পর সন্তানদের নিয়ে পিরোজপুরে যাই। তখন আমার স্ত্রী দেখতে পান ছেলেদের কাছে বেশকিছু টাকা রয়েছে। পরে ছেলেদের কাছ থেকে জানতে পারি যে তারা ডিজির বাসা থেকে ৫২ হাজার টাকা নিয়েছে।’

নেছার উদ্দীন হাওলাদার বলেন, ‘ওই সময়ে (৩০ এপ্রিল) আমার স্ত্রী ছেলেদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঢাকায় চলে যান এবং ডিজির পারিবারের সঙ্গে দেখা করে ঘটনা খুলে বলেন। তখন তারা বলেছিলেন যে বাড়িতে তেমন টাকা নেই। এ নিয়ে আপনারা উদ্বিগ্ন হয়েন না।

‘পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার তিনি খুলনার বাড়িতে এসে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমাদের ডাকেন। আমরা গিয়ে তার টাকা ফেরত দিয়ে ক্ষমা চাই। এভাবে বিষয়টির মিমাংসা হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তারা আমাদের আবারও ডেকে পাঠান এবং তার অনুপস্থিতিতে কেন আমার সন্তানরা তার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেছে তার সেই কৈফিয়েত চান।

‘এক পর্যায়ে তারা বলেন, আমার দুই ছেলের সঙ্গে তারা একটু আলাদাভাবে কথা বলতে চান। এটাতে আমরা কিছু মনে করিনি। কারণ ডিজি আমাদের অনেক শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। আমার স্ত্রী দৌলতপুর কৃষি কলেজের ছাত্রী ছিলেন। ডিজি ওই সময়ে সেখানে শিক্ষক ছিলেন।

‘সাড়ে তিন ঘণ্টা পরও সন্তানরা বাসায় না ফিরলে তাদের ডাকতে ডিজির ফ্ল্যাটে যাই। তখন দেখি আমার দুই ছেলে মেঝেতে পড়ে আছে। আর ডিজির ছেলের হাতে ধারালো চাকু এবং স্ত্রীসহ দুই শ্যালিকার হাতে বৈদ্যুতিক শক দেয়ার সরাঞ্জামাদি। তারা দাবি করেন আমার ছেলেরা তাদের বাড়ি থেকে ৫ লাখ ৩০ ঘাজার টাকা নিয়েছে। দ্রুত সেই টাকা না দিলে পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেন তারা।’

নেছার উদ্দীন আরও বলেন, ‘ঘর থেকে ছেলেদের বাইরে নিয়ে এলে ওরা হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। এক ছেলে জানায় তার হাতে কারেন্টের শক দেয়া হয়েছে। কানের লতি মুচড়ে রক্ত বের করে দেয়া হয়েছে। পায়ের রগ কাটার জন্য কয়েকবার ছুরি দিয়ে খোঁচানো হয়েছে। এসব আঘাতের স্পষ্ট চিহ্নও রয়েছে।’

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনা জেলা শাখার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, এটা অমানবিক এবং আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। যে যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন, কোনো অবস্থায়ই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না।

ওই দুই সন্তানের মা নাছিমা আক্তার বলেন, ‘শিক্ষক হওয়ায় ডিজিকে আমি বাবার মতো সম্মান করতাম। তাই বাবার কাছে সন্তান রেখে যাওয়া নিরাপদ মনে করেছিলাম। তবে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে আমার বাচ্চা দুটিকে অমানুষিক নির্যাতন করেছেন। যে ছেলেটাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি, কারেন্টের শকের কারণে তার একটি হাত অবশ হয়ে গেছে। সে নড়াচড়া করতে পারছে না।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ঘরে ছিলাম না। আমার পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের কাছে টাকটা ফেরত চাওয়া হয়েছে। তবে বৈদ্যুতিক শক দেয়ার কথাটা সত্য নয়।’

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনা জেলা শাখার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক এবং আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। যে যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন, কোনো অবস্থায়ই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। শিশু নির্যাতন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশও আছে।’

শিশু নির্যাতনকারী অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর