বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে রেকর্ড ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা

  •    
  • ৬ মে, ২০২৩ ২১:০৫

চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খুলে পাওয়া গিয়েছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। সে সময় রেকর্ড পরিমাণ ওই টাকা ছাড়াও পাওয়া যায় বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও রুপা।

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে থেকে এবার মিলেছে ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা। ঐতিহাসিক এই মসজিদের দানবাক্সে একসঙ্গে এতো টাকা পাওয়াটা নতুন রেকর্ড। এর আগে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দানবাক্সগুলো খুলে পাওয়া গিয়েছিল রেকর্ড ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা।

শনিবার সকাল ৮টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের তত্ত্বাবধানে দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। দানবাক্সগুলো থেকে প্রথমে টাকা বের করে বস্তায় ভরা হয়।

আটটি দানবাক্সে এবার ১৯ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। পরে মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। গণনার কাজে প্রায় ২০০ জনের ১৩ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। গণনা শেষে পাওয়া গেছে মোট ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী রাত ৯টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

দানবাক্সে থাকা টাকা গণনার কাজে প্রায় ২০০ জনের ১৩ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। ছবি: নিউজবাংলা

এছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।

এর আগে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে পাওয়া গিয়েছিল ২০ বস্তা টাকা।

দিনভর গুনে দেখা গেছে, সেখানে জমা পড়েছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। এছাড়াও পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও রুপা। তখন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৩ মাসে এই পরিমাণ টাকা জমা পড়েছিল মসজিদের দানবাক্সগুলোতে।

টাকা গণনার কাজে মাদ্রাসার ১১২ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন।

দানবাক্স খোলার পর থেকেই গণনা দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় জমান উৎসুক মানুষ। তাদের একজন মশিউর রহমান নাদিম।

ইটনা উপজেলার বাসিন্দা নাদিম বলেন, ‘মানুষের মুখে আর টেলিভিশন ও পত্রিকায় পাগলা মসজিদের দানবাক্সে জমা পড়া টাকার কথা শুনি। এর আগে গতবার দেখতে এসেছিলাম। এবারও নিজ চোখে দেখতে এসেছি। সত্যিই এত পরিমাণ টাকা একসঙ্গে কখনও দেখিনি।’

গণনায় অংশ নেয়া হেফজখানা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আবদুর রহিম ও মো. সাজিদ হোসাইন বলেন, ‘দানবাক্স খোলার পর থেকে গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করেন। আমরা সবসময় অপেক্ষায় থাকি কবে মসজিদের দানবাক্স খোলা হবে। একসঙ্গে এত টাকা দেখতে এবং গুনতে আমাদেরও খুব ভাল লাগে।’

গণনার পর বান্ডেল করা টাকার একাংশ। ছবি: নিউজবাংলা

টাকা গণনার সময় সিনিয়র সহাকরী কমিশনার শেখ জাবের আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার মোছা. নাবিলা ফেরদৌস, সাদিয়া আফরীন তারিন, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা মো. আনোয়ার পারভেজসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও দুপুরে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, কিশোরগঞ্জের পৌর মেয়র ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ মিয়া গণনার কাজ পরিদর্শন করেন।

দান করেন কারা

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুললেই মিলে কোটি কোটি টাকা। দানের এই টাকার পরিমাণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। দিনে তো বটেই, রাতের আঁধারেও অনেকে গোপনে এসে দান করে থাকেন মসজিদের দানবাক্সগুলোতে। টাকা ছাড়াও মেলে বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার।

এছাড়া প্রতিদিন মসজিদে দান করা হয় হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল। কারা দান করেন এসব টাকা এবং কোন খাতে ব্যয় হয় এসব অর্থ সে তথ্য জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

পাগলা মসজিদের নৈশপ্রহরী মো. মকবুল হোসেন। তিনি এই মসজিদে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন ২৭ বছর ধরে।

তিনি বলেন, ‘শুধু মুসলিম নয়; হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী অনেকেও এখানে এসে দান করেন। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল দান করেন অনেকে। করোনার শুরুতে যখন জনসমাগম বন্ধ ছিল, তখনও অনেকে গভীর রাতে এসে দানবাক্সে দান করেছেন।’

তিনি জানান, অতীতে এই মসজিদে কেবল আশপাশের এলাকার মানুষ দান করতেন। এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসে টাকা-পয়সা দান করেন। এছাড়া বিদেশিরা অনেক সময় আসেন, পুরো মসজিদ ঘুরে দেখে যাওয়ার সময় দানবাক্সে বৈদেশিক মুদ্রা দান করেন তারা।

মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলেন, এখানে দান করার পর তাদের আশা পূরণ হয়েছে। আর এ বিষয়টির কারণেই এখানে দান করেন তারা।

দানবাক্সে পাওয়া স্বর্ণালংকার ও টাকার একাংশ। ছবি: নিউজবাংলা

ব্যয় হয় যেসব খাতে

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূইয়া জানান, প্রতি মাসে পাগলা মসজিদের স্টাফ খরচ বাবদ ব্যয় হয় ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ১২৪ ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য এবং অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের জন্য ১৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়। এ ছাড়াও করোনাকালীন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়।

তিনি জানান, পাগলা মসজিদের টাকায় ২০০২ সালে মসজিদের পাশেই একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্তমানে এই মাদ্রাসায় ১৩০ জন এতিম শিশু পড়াশোনা করছে। মসজিদের টাকায় তাদের যাবতীয় ভরণপোষণ ও জামাকাপড় দেয়া হয়ে থাকে। ওয়াকফ স্টেটের অডিটর দ্বারা প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে পাগলা মসজিদের আয়-ব্যয়ের অডিট করা হয়।

পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্স পরিচালনার জন্য ৩১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। এই কমিটিতে জেলা প্রশাসক সভাপতি এবং কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, আইনজীবী, সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই কমিটিতে আছেন।

কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা পৌর মেয়র মো. পারভেজ মিয়া জানান, পাগলা মসজিদের দানের টাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। কমপ্লেক্সটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম স্থাপত্য হিসেবে বানানো হবে। এ জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ কোটি টাকা। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। ২০০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার নারীর জন্য নামাজের আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।

বিগত দুই বছরে দানের পরিমাণ

২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি দানবাক্সগুলো খুলে পাওয়া যায় ২ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা। এরপর ১৯ জুন ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৪ টাকা পাওয়া যায়। একই বছরের ৬ নভেম্বর পাওয়া যায় রেকর্ড পরিমাণ ৩ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৫ টাকা।

দানবাক্সগুলোতে ২০২২ সালের ১৩ মার্চ পাওয়া যায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা, ৩ জুলাই ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা ও ২ অক্টোবর ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা পাওয়া যায়।

চলতি ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওয়া যায়। সবশেষ শনিবার পাওয়া গেল ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর