ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে নবজাতকের মৃত্যুর এক দিন পর মায়েরও মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। পরে শনিবার না ফেরার দেশে যান তার মা ৩২ বছর বয়সী সুমি আক্তারও।
সুমি আক্তার গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গেরাখোলা দিঘীরপাড় এলাকার মো. বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী। বিল্লাল হোসেন টাঙ্গাইলে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তাদের ৯ বছর বয়সী একটি শিশু সন্তান রয়েছে।
ভুক্তভোগীর পরিবারের ভাষ্য, সুমি আক্তারের প্রসববেদনা উঠলে স্বজনরা তাকে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বৃহস্পতিবার ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে সিজার করার জন্য রাতে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়।
অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই গৃহবধূর গর্ভে বাচ্চা উল্টো অবস্থায় আছে। এসময় তার পেটে টিউমার ছিল বলেও দাবি করেন ডাক্তাররা।
সিজার করার সময় গৃহবধূর অবস্থা সঙ্কটাপূর্ণ হলে বাচ্চা কয়েক টুকরো করে কেটে বের করে মাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। পরে কয়েক ব্যাগ রক্ত দিয়েও বাঁচানো যায়নি সুমিকে।
শুক্রবার বিকাল ৫টায় তার মৃত্যু হলে সন্ধ্যায় মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসে রাতেই দাফন করা হয় বলে জানান সুমির স্বজনরা।
এ ব্যাপারে সুমির স্বামী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রীর আগে-পরে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, কিন্তু কোনো পরীক্ষার রিপোর্টে পেটে টিউমারের কথা বলা হয়নি। এমনকি সিজার করার আগের পরীক্ষায়ও টিউমারের কোনো কথা বলা হয়নি।
‘যখন অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে সিজার করা হয়, তখন বলা হয় পেটে টিউমার! আরও জানানো হয়, বাচ্চা গর্ভে উল্টো অবস্থায় রয়েছে। বাচ্চা বাঁচালে মাকে বাঁচানো যাবে না। পরে মাকে বাঁচানোর কথা বলা হলেও বাচ্চা ও মা দু’জনই হারিয়ে গেল!’
ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক এ বিষয়ে বলেন, শনিবার সকাল থেকে এ ব্যাপারে ডাক্তারদের নিয়ে আমি আমার অফিসে বসে মিটিং করেছি। জানতে চেষ্টা করেছি, আমাদের ডাক্তারদের কোনো অবহেলা ছিল কি না। যদি কারো কোনো অবহেলা পাওয়া যায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ‘রোগীর যেদিন সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়, সেদিন অপারেশন শেষে হাসপাতাল থেকে পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়।
‘আমরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি জানতে চেষ্টা করি। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মায়ের জটিল অবস্থার কারণে বাচ্চাটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তবে একদিন পর রোগী মারা গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর পুলিশকে অবহিত করেনি ’
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনায় রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত দেয়া হলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।