ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছিল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ফুল দিয়ে তাদের অনেকে চলেও গিয়েছিল, তবে পেছনে থেকে যাওয়া এক নেতাকে পেয়ে কাঠ এবং বাঁশ দিয়ে বেদম পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে তার মাথা ফেটে যায়।
শনিবার দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে কার্জন হলের দ্বিতীয় গেটের একটু পরেই এই ঘটনা ঘটে।
এ সময় কার্জন হলের দ্বিতীয় গেটে অবস্থান করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন। তার নেতৃত্বেই ঘটনাস্থলে বাইকে করে আসেন মারধরকারীরা। তাদের কয়েকজনের হাতে কাঠ এবং বাঁশ দেখা যায়।
আহত ছাত্রদল নেতা হলেন সাব্বির আহমেদ। তিনি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর মারধর করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে হলে ঘটনাস্থলের পাশেই অবস্থান করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘এ ছাত্রদল কর্মী কি না, আমি জানি না।’
আপনার কর্মীরাই মারধর করেছে জানালে তিনি বলেন, ‘কারা মেরেছে আমি জানি না। আমি এ ব্যাপারে খোঁজ নিব।’
খোঁজ পেলে কোন ব্যবস্থা নেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে খোঁজ নিয়ে দেখি।’
এদিকে ছাত্রদলের দাবি, ছাত্রলীগের হামলায় তাদের তিন নেতা আহত হয়েছেন। সাব্বির ছাড়া বাকি দুই নেতা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিক।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভর্তি পরীক্ষা শেষে কার্জন হলের দ্বিতীয় গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা শেষ বের হওয়া শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ছাত্রদলের বিশ- ত্রিশ জন নেতা। বিশ মিনিট পর ফুল দেওয়া শেষ করে তারা সবাই চলে যায়। তার প্রায় পাঁচ মিনিট পর ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি শয়নের নেতৃত্বে পাঁচ ছয়টি বাইকে দশ-বারো জন ছাত্রলীগ নেতা কার্জন হলের দ্বিতীয় গেটে আসে। এসময় তাদের কয়েকজনের হাতে কাঠ এবং বাঁশ দেখা যায়।
গেটে ছাত্রদলের কাউকে না পেয়ে সাব্বির আহমেদকে দেখে ছাত্রলীগের নেতারা তার দিকে তেড়ে যায়। আর ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গেটের ভিতর ঢুকে পড়ে। পরে বাকি কর্মীরা সাব্বিরকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। এতে তার মাথা ফেটে রক্ত পড়া শুরু হয়। পরে সাব্বির সেখান থেকে কোনোরকমে আত্মরক্ষা করে সরে যায়। তার বন্ধুরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী টঙ্গি থেকে আসা একজন পরীক্ষার্থীর মা সাব্বিরকে না মারতে অনুরোধ করতে দেখা যায়।
মারধরের ঘটনার পর অভিভাবক বলেন, ‘এ আমি কি দেখলাম! আমার এখনো হাত পা কাঁপছে। এরকমভাবে মানুষ মানুষরে মারে! এত মরেও যেতে পারে। বাচ্চারা লেখাপড়া করে এগুলো করার জন্য?’
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল আমরা কলা ভবনের সামনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ফুল দিব। কিন্তু শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রলীগের দেশীয় অস্ত্রসহ উপস্থিতি দেখে আমরা হাইকোর্টের সামনের কার্জন হলের গেইটে দাঁড়িয়ে ফুল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেখানে এসেও আমাদের উপর হামলা।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এহেন ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানায়।
অন্যথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল রাজপথেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করবে বলে জানান আরিফুল ইসলাম।