শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ে বৈদ্যুতিক শকে এক বন্যহাতিকে হত্যার অভিযোগ ওঠেছে।
শনিবার উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাকাকুড়া এলাকায় সকালে উপজেলার নুহু মিয়ার ধান ক্ষেত থেকে ওই বন্যহাতির মৃতদেহ উদ্ধার করেন বন বিভাগ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা এটিএম ফায়েজুর রহমান আকন্দ।
বনবিভাগ ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৫-৩০ টি হাতি পাহাড়ের ভিতর থেকে খাদ্যের সন্ধানে নেমে আসে লোকালয়ে। স্থানীয় কৃষকরা মশাল জ্বালিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে শব্দ করে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করে। পরে খাদ্যের সন্ধানে তারা উপজেলার গারো পাহাড়ের বাকাকুড়া ঢাকাই পট্রিতে নুহু মিয়ার মাছ চাষের প্রজেক্টের ধানের ক্ষেতে নামে।
ধানক্ষেতের মালিক নুহু মিয়া হাতির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে আগে থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ধান ক্ষেতে ফেলে রাখে জিআই তার। ওই তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সেখানেই মারা যায় একটি বড় হাতি। পরে সেখান থেকে বনবিভাগের টহল দল হাতির মরদেহ উদ্ধার করে। আর সেইসাথে জিআই বৈদ্যুতিক লাইনের সংযোগের তার উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় স্থানীয় জিয়াউল হক ও তালেব মিয়া বলেন, ‘প্রশাসন ধান ক্ষেত ক্ষতি করলে ক্ষতিপুরণ দেয়, তাহলে এভাবে হাতি মারা ঠিক না। আমরা অনেক না করেছি কিন্তু ওই লোক মানে নাই।’
শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদসহ বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা।
ফায়েজুর রহমান বলেন, ‘হাতিটির নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, ‘হাতির আক্রমণে মানুষ মারা গেলে আমরা বনবিভাগ থেকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে আসছি। আর হাতি- মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে বন বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
‘আমরা গতকাল বিকেলে শুনি হাতি নেমে এসেছে। হাতির দল এখন ৩টি দলে ভাগ হয়েছে। জনগনকে আমরা বুঝিয়েছি। স্থানীয় জনগন কথা শুনেছে। কিন্তু পাগলার মুখ গ্রামের নুহু মিয়া তার বাকাকুড়ার ঢাকাইয়া মোড় এলাকার ধান ক্ষেতের পানিতে বিদ্যুৎ সংযোগের জিআই তার ফেলে রাখে।
‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি ওই তারের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতিটার মৃত্যু হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এদিকে হাতি হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছেন পরিবেশ বাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন।
উল্লেখ্য, তিন সপ্তাহের ব্যবধানে শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ের শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় হাতির আক্রমণে তিন কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বর্তমানে গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর জনমনে হাতি নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।