বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অসুস্থ হয়ে জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পরিবার বলছে পরিকল্পিত হত্যা

  • প্রতিনিধি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়    
  • ৪ মে, ২০২৩ ১৫:০৪

ওয়ারী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া গেলে স্থানীয় থানার মাধ্যমে পুলিশই মামলা করবে। আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র রাজু আহমেদের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

খিঁচুনি ও শ্বাসকষ্টে অচেতন অবস্থায় রাজুর মৃত্যু হলেও ঘটনার চার দিন পর পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে দাবি করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন রাজুর বাবা।

রাজুর পরিবার ও তার বন্ধুরা জানান, গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় থেকে ফিরে শনিবার পুরান ঢাকার নারিন্দার একটি মেসে হঠাৎ খিঁচুনি দিয়ে রাজু অচেতন হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে অবস্থা খারাপ দেখে রাজুর সহপাঠী ও মেসের অন্যরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।

রাজুর পরিবারের দাবি, তাদের বাসার টিউবওয়েলের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে কেউ ঘুমের ওষুধ বা এমন জাতীয় কোনো রাসায়নিক মিশিয়ে দিয়েছিল, যার ফলে বিষক্রিয়ায় রাজুর মৃত্যু হয়। একই টিউবওয়েলের পানি পান করে রাজুর পরিবারের বাকি সদস্যরাও বমি করে ও দুই দিন অতিরিক্ত ঘুমে মগ্ন ছিলেন।

রাজুর বাবা কৃষক আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার আগের দিন শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে রাজু, রাজুর মা এবং বোন একসাথে খাবার খায়। খাবার খাওয়ার পর রাজুর মা ও বোনের বমি হয়। আমি সকালের নাশতা ও টিউবওয়েলের পানি খেয়ে মাঠে বীজ বুনতে যাই।

‘এরপর বাসায় ফিরে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে শরীর খারাপ অনুভব করি। পরে বাসায় ফিরে দেখি রাজু, রাজুর মা ও আমার ছোট মেয়ে ঘুমাচ্ছে। মাঠে কাজ থাকায় শরীর খারাপ লাগলেও আমি কাজে চলে যাই। এরপর সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এসে দেখি, ওরা সবাই তখনও ঘুমাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বড় বোন (রাজুর ফুফু) ওদেরকে ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়াশব্দ দেয়নি। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় রাজুর ঢাকায় যাওয়ার ট্রেন থাকায় রাত ৮ টার দিকে তাকে টেনে তুলে তার ফুফু। ততক্ষণে শরীর খারাপ থাকায় আমিও ঘুমিয়ে যাই।

‘রাজুর ফুপু ওকে তুলে দিয়ে, জামা কাপড় গুছিয়ে দিয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় রান্না করা খাবার টিফিন বক্সে দিয়ে বাসার পাশের এক ভ্যানগাড়িতে তুলে দেয়। তিনি রাজুকে স্টেশনে পৌঁছে দেন। সেখানে রাজুর ক্লাসমেট একই বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়ার সঙ্গে তার দেখা হয়।’

রাজুর বাবার ভাষ্য অনুযায়ী, ভ্যানচালক সাদিয়াকে বলে রাজুকে একটু দেখে রাখতে এবং তার বাসায় সবাই যে অসুস্থ সে বিষয়টিও জানান। পরবর্তী সময়ে ঢাকার ট্রেনে ওঠার আগেই রাজু তার এই সহপাঠীকে তার অসুস্থতার কারণ সন্দেহজনক বলে জানান।

তিনি জানান, তাদের টিউবওয়েলে হয়তো কেউ কিছু দিয়েছে এবং বাসার সবাই এই পানি খেয়ে ঘুমাচ্ছে।

রাজুর রুমমেট শরীয়তুল্লাহ জানান, শনিবার বিকেলে রাজুর খাওয়া-দাওয়ার পর তিনি তার গায়ে হাত দিয়ে দেখেন শরীর অনেক গরম। তখন কারণ জানতে চাইলে রাজু তাকে তাদের বাসায় এক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছে এবং সবাই টানা ঘুমাচ্ছে বলে জানান।

শরীয়তুল্লাহর ভাষ্য অনুযায়ী, পরবর্তী সময়ে রাজু খেলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েন। তারপর হঠাৎ খিঁচুনি ওঠার মতো হয় এবং তিনি গিয়ে রাজুকে নাড়াচাড়া করে কোনো সাড়া না পেয়ে তার আরেক রুমমেট আরাফাতকে জানান। তারপর তারা রাজুর অন্য বন্ধুদের জানিয়ে তাকে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান।

রাজুর সহপাঠী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত জানান, আজগর আলী হাসপাতালে নেয়া হলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। দেরি না করে অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজুকে ঢাকা মেডিক্যালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান। পরবর্তী সময়ে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়, তবে এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রাজুর বাবা।

রাজুর বাবা আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। টাকা-পয়সা না থাকলে মামলা চালাব কীভাবে? তাই প্রথমে মামলা করতে চাইনি।

‘এখন গ্রামের সবাই মামলা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাই মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সুষ্ঠু বিচারের জন্য রাজুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সবার সহযোগিতা চাই।’

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘এই ঘটনায় ময়নাতদন্ত হয়েছে। আমরা মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। সংশ্লিষ্ট থানাকেও জানানো হয়েছে।’

ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ময়নাতদন্ত হয়ে গেছে, তবে এখনও আমরা রিপোর্ট হাতে পাইনি। ঘটনার পর রাজুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। স্থানীয় থানার মাধ্যমেও যোগাযোগ করা হয়েছিল, তবে তারা মামলা করতে চাননি।

‘এখন তারা চাইলেও মামলা করতে পারবেন না। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া গেলে স্থানীয় থানার মাধ্যমে পুলিশই মামলা করবে। আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।’

এ বিভাগের আরো খবর