বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জাহাঙ্গীর কেন্দ্রের ইন্ধন পাচ্ছেন কি না, প্রশ্ন আওয়ামী লীগে

  •    
  • ৪ মে, ২০২৩ ০৮:৪৯

গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতার একজনকে উদ্ধৃত করে দলটির দায়িত্বশীল এক নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিনি (জাহাঙ্গীর) ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিষেধ করলে তিনি নির্বাচন করবেন না, কিন্তু কেন্দ্র থেকে এখনও কেউ কি তাকে কোনো বার্তা দিয়েছেন? কেন্দ্র থেকে তাকে ডেকে এখনও কোনো আলোচনা করা হলো না কেন?’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ইন্ধনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) বরখাস্তকৃত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হয়েছেন কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির গাজীপুর জেলার নেতারা।

গাসিক নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গাজীপুর আওয়ামী লীগ নেতাদের মঙ্গলবারের বৈঠকে প্রশ্নটি উত্থাপন হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

কী আলোচনা হয় বৈঠকে

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নিউজবাংলাকে জানান, এতে গাজীপুরের নেতারা জাহাঙ্গীরের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেও সদুত্তর পাননি।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতার বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। তারা বলেন, দল দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানকে প্রার্থী করেছে, কিন্তু জাহাঙ্গীর এবং তার মা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতার একজনকে উদ্ধৃত করে দলটির দায়িত্বশীল এক নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিনি (জাহাঙ্গীর) ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিষেধ করলে তিনি নির্বাচন করবেন না, কিন্তু কেন্দ্র থেকে এখনও কেউ কি তাকে কোনো বার্তা দিয়েছেন? কেন্দ্র থেকে তাকে ডেকে এখনও কোনো আলোচনা করা হলো না কেন?

‘তা ছাড়া জাহাঙ্গীর নানা ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলছেন। ২০১৩ সালে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। তখনও তাকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ ইন্ধন দিয়েছিলেন। এবারও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। এবারও কি তাকে কেন্দ্র থেকে কেউ ইন্ধন দিচ্ছে?’

আওয়ামী লীগের ওই নেতা জানান, দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয় দলের প্রধান ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম গাজীপুরের নেতাদের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি।

তিনি আরও জানান, মির্জা আজম গাজীপুরের নেতাদের প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি প্রথমে বলেন, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে। তিনি ফিরলে তার সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পরে আবার বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হওয়ার পর জাহাঙ্গীরকে ডাকা হবে। তখন গাজীপুরের এক নেতা বলেন, ‘সে প্রার্থী হয়ে গেলে ডেকে আর কী হবে!’ জবাবে মির্জা আজম পরে আলোচনার কথা বলে পাশ কাটিয়ে যান।

এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার টিকিট পান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে (২০১৩ সাল) আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তখন নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপি (প্রয়াত) নেতা এম এ মান্নান।

গুঞ্জন রয়েছে দলের এক শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে ২০১৩ সালে জাহাঙ্গীরকে সমর্থন দেয়া হয়। ওই নেতা ও তার বলয়ের লোকজনই গাজীপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরকে।

মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে কীভাবে জয়ী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। শুরুতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান তার নির্বাচনী এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জাহাঙ্গীরকে প্রার্থী হিসেবে গুরুত্ব না দিতে চাইলেও জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরের প্রভাবের বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তারা প্রশ্ন তোলেন, কার সাহসে, কোন শক্তির বলে বলীয়ান হয়ে জাহাঙ্গীর বারবার দলের নির্দেশ অমান্য করছেন, বারবার বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন।

গাজীপুরের নেতাদের ভাষ্য, দল জাহাঙ্গীরকে একবার মনোনয়ন দেয়ার সময় বর্তমান প্রার্থী আজমত উল্লা খান বিরোধিতা করেননি।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নিজ জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নিয়ে গাজীপুর সিটির তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জেরে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে।

২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১৭(৬) এবং ৪৭(২) ধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে সাধারণ ক্ষমা চান জাহাঙ্গীর। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার অঙ্গীকার করেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ।

গাজীপুর আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্ধৃত করে মঙ্গলবারের বৈঠকে অংশ নেয়া এক নেতা জানান, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন জাহাঙ্গীর, যা তার ক্ষমা চাওয়ার লিখিত অঙ্গীকারের পরিপন্থি। এ অবস্থায় তাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা প্রয়োজন।

এ বিভাগের আরো খবর