তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে যে ভুল করেছিল তা উপলব্ধি করে এখন বাংলাদেশকে সর্বতোভাবে সহায়তা করতে চায়। সে জন্য আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানাই।’
মঙ্গলবার সচিবালয়ে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকরা সোমবার ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ২২৫ কোটি ডলারের প্রকল্প ঋণচুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক তাদের ভুল অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়ে ওয়াশিংটনে নিয়ে গেছে। আমরা তাদের সব ধরনের সহায়তা নেব তা নয়। বিশ্বব্যাংক পরবর্তীতে পদ্মা সেতুতেও সহায়তা করতে চেয়েছিল, আমরা নেইনি। আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্পেও ইতিপূর্বে সহায়তা করতে চেয়েছে।
‘কোন সহায়তা নেব আর কোনটা নেব না সেটা ঠিক করার সামর্থ্য ও সাহস জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্জন করেছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফের প্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছেন- বাংলাদেশ আজ পৃথিবীতে রোল মডেল। এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রয়োজন।
‘মির্জা ফখরুল সাহেব কী বলেন আর আইএমএফ প্রধান ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট কী বলেন! জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ইমেজ বিশ্ব অঙ্গনে আজ কোন সুউচ্চ স্থানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়।’
মে দিবস স্মরণে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার গরিব-মেহনতি মানুষের সরকার। সে কারণে আমাদের সরকার শ্রমিক-কর্মচার-কৃষকের কল্যাণে নজর দিয়েছে। ২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ১ হাজার ৬৬২ টাকা। এখন তা ৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর সঙ্গে আছে অন্যান্য বেনিফিট ও এলাউন্স। পাটকল শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও তাই। এই মজুরি আরও বৃদ্ধির ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চলছে।’
‘আওয়ামী লীগ শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করেছে’- মে দিবসে বিএনপির এমন বক্তব্যের জবাবে মন্ত্রী হাছান বলেন, ‘তাদের সময় শ্রমিক-কর্মচারী-কৃষকদের গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। যদি এই দেশে শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকার কেউ লুণ্ঠন করে থাকে, তাদের অধিকার খর্ব করে থাকে, সেটি হচ্ছে বিএনপি।
‘বিএনপি ছিল ধনিক ও বণিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী। আজও তারা লুটেরাদের প্রতিনিধিত্ব করে। এ দেশের মেহনতি মানুষের প্রতিনিধিত্ব বিএনপি করে না।
‘জিয়াউর রহমানের বক্তব্য ছিল- ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই ঋণ ফেরত না দেয়ার সংস্কৃতি জিয়াউর রহমানই চালু করেছিলেন।’
তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সংবাদপত্র কর্মচারী ও প্রেস শ্রমিক নেতৃবৃন্দের বৈঠক
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অফ নিউজপেপার প্রেস ওয়ার্কার্স নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠকে কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মতিউর রহমান তালুকদার ও প্রেস ফেডারেশনের সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন খান তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন।
অবসরকালীন সুবিধা বঞ্চিত করে ছাঁটাই বন্ধ করা, প্রেস ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণদান, হজ কোটা, সংবাদপত্র বিষয়ক কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব এবং একটি কার্যালয়ের জন্য স্থান বরাদ্দের দাবিসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন মতিউর রহমান তালুকদার।
সংবাদপত্র শ্রমিক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দসহ সবাইকে মে দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাছান মাহমুদ বলেন, ‘সংবাদপত্রে শুধু সাংবাদিকরা নন, শ্রমিক-কর্মচারীরাও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। তাদের কাজ ছাড়া সংবাদপত্র ছাপা সম্ভব নয়।
‘অতীতে অনেক ক্ষেত্রে তাদের দাবিগুলো যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। আমি দাবি-দাওয়াগুলো যথাসম্ভব আশু পূরণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব এবং সংবাদপত্রে বেতন বকেয়ার মনিটরিং কমিটিকে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেয়া হবে।’
ফেডারেশন নেতাদের মধ্যে খায়রুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, তানভীর ইসলাম, আবিদা সুলতানা, শামীম চৌধুরী, আনিছুর রহমান, মোস্তাক আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক পাটোয়ারি প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন।