বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সভ্যতার প্রধান কারিগর শ্রমজীবী মানুষেরা বাংলাদেশে আজ সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত। তারা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে এই মানুষগুলো দিশেহারা। তারা অমানবিক জীবন কাটাচ্ছে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অস্থায়ী মঞ্চে শ্রমিক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। মহান শ্রমিক দিবস উপলক্ষে সোমবার এই সমাবেশের আয়োজন করে শ্রমিক দল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ক্ষমতাসীনরা মিথ্যাচার করছে। নেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা নানা কথা বলছেন। তারা তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছেন না, আবার অসুস্থতা নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। এটা লজ্জাজনক।’
নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের গোলযোগ বরদাশত করা হবে না- পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গোলযোগ কোথায় দেখছেন? গোলযোগ তো আপনারা সৃষ্টি করছেন। আজকে খুলনায় শ্রমিক দলের শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা হামলা করে পণ্ড করে দিয়েছেন। সেখান থেকে শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আবার সেই পুরনো খেলা শুরু হয়েছে। তারা সেই পুরনো কায়দায় আরেকটি নির্বাচন করতে চায়। ভোটার যেন ভোট দিতে না পারে, ভোট চুরি করে তারা যেন ক্ষমতায় আসতে পারে এবং আবার যেন ক্ষমতা দখল করতে পারে সেজন্য এখন থেকে হুমকি দিয়ে জনগণকে ভয় দেখাতে চায় সরকার।’
দেশজুড়ে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা শুধু ঢাকায় কিছু বিদ্যুৎ দেয়, যাতে মানুষ রাস্তায় না নামে। ঢাকার বাইরে কোনো বিদ্যুৎ নেই, শুধু লোডশেডিং আর লোডশেডিং। অথচ তারা সব সময় বলছে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে। এত বাড়িয়েছে যে, তাদের দলের লোকেরা সংসদীয় কমিটিতে বলছে, এত বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজন ছিল না। কারণ এখন তা দিতে পারছে না।’
‘নতুন খবর এসেছে যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারা এভাবে লুট করেছে। পুরো অর্থনীতিতে লুটেরাদের রাজত্ব কায়েম হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শ্রমিকরা আজ সবচেয়ে বেশি শোষণের শিকার। তারা দুই বেলা ঠিকমতো খেতে পাচ্ছে না। কারণ চাল, ডাল ও লবণসহ প্রতিটি জিনিসের দাম যে হারে বেড়েছে, তা তাদের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিচ্ছে। মির্জা ফখরুলসহ আমাদের কয়েকজন নেতা বিশেষ আমন্ত্রণে কয়েকজন বিদেশির বাসায় গিয়েছিলেন। অথচ তারা (সরকার) বলছে যে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিচ্ছে।
‘আমরা বলতে চাই, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে। আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আজ বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যদি সাহস থাকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। বলছেন তো জনগণ আপনাদের সঙ্গে আছে। তাহলে এতো ভয় কেন?’
শ্রমিক দল সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু ও আহমেদ আজম খান।
মে দিবসের শুভেচ্ছা
মহান মে দিবস উপলক্ষে সোমবার সকালে এক বাণীতে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সব শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। বাণীতে ফখরুল বলেন, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায় এবং তা রক্ষায় বিএনপি কখনোই পিছপা হয়নি।
‘সব শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় আমরা সর্বদা সচেতন ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
‘শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় বিএনপি সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আগামীতেও আমরা একইভাবে শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষের কল্যাণে নিরলস কাজ করে যাব।’