টাঙ্গাইলের সখীপুরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহকে গার্ড অফ অনার (রাষ্ট্রীয় মর্যাদা) দেয়ার সময় আপত্তি জানিয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম।
শনিবার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খান ওরফে নয়া মুন্সির মরদেহকে গার্ড অফ অনার দিতে গেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আলম এমন আপত্তির সম্মুখীন হন।
কাদের সিদ্দিকী ইউএনওকে একজন পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে গার্ড অফ অনার দেয়ার অনুরোধ জানান। সে সময় ইউএনও ফারজানা আলম পুলিশের দল নিয়ে মরদেহের পাশ থেকে সরে মাঠের অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়ান।
পরে জানাযা-পূর্ববর্তী বক্তব্যে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘পুলিশের গার্ড অফ অনার দেয়া নিয়ে আমি খুবই মর্মাহত। রাত ১২টার সময় একজন শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলেন, বেলা ২টার সময়ও একজন ম্যাজিস্ট্রেট রাখা হলো না। আজকে যদি বঙ্গবন্ধু থাকতেন, তাহলে এখানকার অনেক কর্মকর্তাকে ঢাকায় পাঠাতে পারতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ে মানুষ যত বড়ই হোক, পুরুষের সঙ্গে জানাযায় শামিল হওয়ার তার কোনো সুযোগ নেই। ইউএনও সাহেব খুব ভালো মানুষ বলে শুনেছি। তার মর্যাদায় হয়তো লেগেছে। আমার মেয়ের বয়সও তার চেয়ে বেশি হবে।
‘আমি সরকারকে অনুরোধ করব, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করার কারণে আগামীকালের মধ্যেই যেন এই ইউএনওকে এখান থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়।
‘জানি না কী হবে। তবে একটি মরদেহের সঙ্গে বেয়াদবি করা একজন মুসলমান হিসেবে আমি মেনে নিতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘শরীয়ত মেনেই মুসলমানদের চলতে হবে, শরীয়ত কোনোভাবেই একজন মহিলার জানাযায় অংশ নেয়া সমর্থন করে না। ইউএনও সাহেব বলেছেন- এটা জানাযা নয়, গার্ড অফ অনার। কোনো মহিলার গার্ড অফ অনার দেয়ারও কোনো সুযোগ নেই। আমি মেয়েদেরকে সবচেয়ে বেশি সম্মান করি।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খান ওরফে নয়া মুন্সি মারা যান। শনিবার যোহরের নামাজের পর সখীপুর পিএম পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে তার জানাযা নামাজের সময় নির্ধারণ করা হয়।
জানাজার আগে ইউএনও ফারজানা আলম মরদেহের পাশে এসে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করতে চাইলে কাদের সিদ্দিকী তাকে অনুরোধ করেন, যেন তিনি সামনে না থেকে অন্য কোনো পুরুষ প্রতিনিধি দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানান। পরে ইউএনও মরদেহের পাশ থেকে সরে মাঠের অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়ান।
এ সময় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী রাগ করে চলে যেতে চাইলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অনুরোধ করে তাকে ফেরান।
জানাযা শেষে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়া মুন্সির কবরের পাশে যান। এ সময় ইউএনও ফারজানা আলম ওই মুক্তিযোদ্ধার মরদেহের প্রতি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা (গার্ড অফ অনার) প্রদর্শন করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফারজানা আলম বলেন, ‘জানাযা নামাজ এবং গার্ড অফ অনার ভিন্ন বিষয়। উনি হয়তো ধর্মীয় অনুভূতি থেকে বলতে চেয়েছিলেন- গার্ড অফ অনার মহিলারা দিতে পারবে না।
‘আমার ধারণা, ওনি জানাযা নামাজের সঙ্গে গার্ড অফ অনার মিলিয়ে ফেলেছেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের নির্দেশনা ছিল গার্ড অফ অনার দিতে, না দিলে আমরা যেন চলে যাই। কিন্তু পরে উপস্থিত স্থানীয়দের অনুরোধে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অফ অনার দিয়েই আমরা চলে এসেছি।’
জানাযা নামাজে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা (বীর প্রতীক), পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ আজাদ, কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই আজাদ সিদ্দিকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত শিকদার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার এমও গণি, সাবেক পৌর মেয়র সানোয়ার হোসেন সজীব প্রমুখ অংশ নেন।