ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী ভাদুঘরের বান্নি মেলা। এ মেলা ঘিরে উৎসবে মেতেছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ। শত বছরের ঐতিহ্য এই গ্রামীণ ‘বান্নি মেলা’।
শুক্রবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুণ্য স্নানের মধ্য দিয়ে মেলা শুরু হয়।
বাংলার বৈশাখ মাসের ১৫ তারিখে এক দিনের এ মেলা ঘিরে এলাকায় দেখা দিয়েছিল উৎসবের আমেজ।
মেলার ঐতিহ্য অনুযায়ী, এ এলাকার পরিবারগুলোর যার যেখানে আত্মীয়স্বজন রয়েছেন, সবাইকে দাওয়াত দেয়া হয়। বিবাহিত মেয়েরা স্বামী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে বেড়াতে আসেন বাবার বাড়ি। যারা ঢাকাসহ দূর-দূরান্তে চাকরি করেন, তারাও ছুটি নিয়ে এ সময় চলে আসেন নিজ গ্রামে। ঘরে ঘরে ভাজা হয় মুড়ি, মুড়কি, বিন্নি ধানের খই। ফলে গুণধর ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার প্রতিটি বাড়ি আত্মীয়স্বজনে ভরপুর।
শুক্রবার তিতাস পাড়ের বান্নি ঘাটে ঘুরে দেখা যায়, দিনব্যাপী এ মেলাতে বিপুল সংখ্যাক মানুষের সমাগমে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। সকাল সকাল হিন্দু ধর্মালম্বীদের পুণ্য স্নানের মধ্য দিয়ে মেলা শুরু হয়।
মেলায় বিভিন্ন ধরনের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন ক্রেতারা। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী ক্রয় করছেন লোকজন। পসরাতে রয়েছে গরু, হাতি, ঘোড়া, উট, বক, পুতুল ইত্যাদি মাটির তৈরি খেলনা। এ ছাড়াও গৃহস্থলির সামগ্রীর অনেক জিনিস উঠেছে। গ্রাম বাংলার বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের দোকানও রয়েছে। ক্রেতারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন সামগ্রী কিনে নিচ্ছেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাদুঘরের এই বান্নি মেলার ঐতিহ্য হারাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ক্রেতা-বিক্রেতারা। এক সময় বান্নি মেলার আকর্ষণ হিসেবে মাটির তৈজসপত্রে পসরা সবচেয়ে বেশি থাকলেও এখন তার সংখ্যা খুব কম।
মেলায় ঘুরতে আসা কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে এ বান্নি মেলা দেখে আসছি। আমাদের নানা মামাদের সঙ্গে এ মেলায় আসতাম। তবে কালের আর্বতে ও আধুনিক জীবনযাপনের কারণে বর্তমানে লোকজ সংস্কৃতি এই ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর উৎকর্ষতা আগের মত নেই। এই মেলায় মাটির জিনিসপত্র ছিল মূল আকর্ষণ। কিন্তু তা এখন দিন দিন বিলিন হয়ে যাচ্ছে।’
মেলায় পণ্য সামগ্রী কিনতে আসা স্কুলছাত্র জিয়াদুল করিম বর্নব বলেন, ‘আমার আম্মুর নানা বাড়ি ভাদুঘরে। ওনার মুখে বৈশাখ মাসের এই বান্নি মেলার কথা শুনেছি। তবে এই প্রথম আসার আনন্দটাই অন্য রকম।’
কবির উদ্দিন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, ‘সকাল থেকে বেচাকেনা মোটামুটি ভালো হচ্ছে। তবে আগের মত মাটির জিনিসপত্রের দোকান কম। প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের কারণে মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেছে। গ্রাম অঞ্চলের বান্নি মেলা বলতেই মাটির জিনিসপত্র। কিন্তু আর কয়েক বছর পর মাটির জিনিস বলতে কিছুই থাকবে না।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম জানান, দিনব্যাপী এ মেলায় পুলিশ সদস্যদের সার্বক্ষণিক চারদিকে নজরদারি ছিল।