সুদানে আধা সামরিক বাহিনী আরএসএফের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের মধ্যে রাজধানী খার্তুমে হামলার শিকার হয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের বাসভবন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সুদানে বাংলাদেশ দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তাদের ভাষ্য, গুলিতে দূতাবাস ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসার ক্ষতি হলেও এতে কেউ হতাহত হননি।
কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা খার্তুম থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে মাদানী শহরে রয়েছেন।
তারা আরও জানান, গত ১৫ এপ্রিল আরএসএফ ও সেনাদের সংঘর্ষের মধ্যে ২২ এপ্রিল বাংলাদেশ দূতাবাসের জানালা ও দেয়াল ভেদ করে গুলি ঢুকে পড়ে।
ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বাংলাদেশিদের
সুদানে সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মঙ্গলবার ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে কীভাবে কোন পদ্ধতিতে তারা যাত্রা করবেন। সবাইকে দূতাবাসের নির্দেশনা মেনে রেজিস্ট্রেশন এবং প্রয়োজনীয় কাজ করার অনুরোধ করছি।’
তিনি আরও লিখেন, ‘বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনুরোধ করছি দূতাবাসে যোগাযোগ না করার জন্য। কারণ সবাই ব্যস্ত এবং রুটগুলো নিরাপত্তার খাতিরে না জানানোই ভালো। আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
এপ্রিলের মাঝামাঝিতে সুদানে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর দেশটিতে মানবিক সংকট দেখা দেয়। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনী ইতোমধ্যে খার্তুম থেকে তাদের দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করেছে। সশস্ত্র সংঘর্ষের মধ্যে শনিবার বাংলাদেশিদের সুদান ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়ে সতর্কতা জারি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চলমান সংঘাতের মধ্যে সুদান থেকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সরিয়ে নিলেও সেখানে মিশন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। দেশটিতে বসবাসরত দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশির কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি
সুদানে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সোমবার রাজি হয় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ। ওই দিন রাত ১০টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বরাতে জানায় বিবিসি।
ব্লিঙ্কেন জানান, আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টা আলোচনার পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দুই পক্ষ।
সর্বশেষ ঘোষণা করা যুদ্ধবিরতি চুক্তি এই যুদ্ধের মধ্যে ঘোষণা করা তৃতীয় চুক্তি, তবে কার্যত এতে সমাধান আসেনি। ঈদুল ফিতরের জন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও সহিংসতা থামেনি সুদানে।
সুদানের সামরিক নেতৃত্বের দুই অংশের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে এই সহিংসতা শুরু হয়। বেশ কিছু দিন ধরে চলা সহিংসতায় রাজধানী খার্তুমে বোমা বিস্ফোরণ, গোলাবর্ষণ ও গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে।
খার্তুমের বাসিন্দারা বলছেন, যে শহরে ঈদের সময়টায় পরিবেশ উৎসবমুখর থাকে, সেখানে এখন বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ।
কী নিয়ে সংঘাত
সুদানে কীভাবে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনা হবে, মূলত তা নিয়ে দুই অধিনায়কের দ্বন্দ্ব থেকে এই লড়াই চলছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
দেশটিতে বর্তমান সামরিক সরকার চলে মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে। তার সঙ্গে উপনেতা হিসেবে আছেন আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেদতি দাগালো।
বেসামরিক শাসনে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই দুটি বাহিনীকে একীভূত করার কথা, কিন্তু আরএসএফ তাদের বিলুপ্ত করার বিপক্ষে এবং এই পরিকল্পনা থামানোর জন্য তাদের বাহিনীকে রাস্তায় নামায়। এ ঘটনা সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে পূর্ণমাত্রার লড়াইয়ে রূপ নেয়।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, সুদানে সংঘর্ষে চার শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষ (যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু) সুদান ছেড়ে পালিয়েছে পাশের দেশে।