দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন ও তার সহযোগী শোয়েব পাপ্পুর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হোসেনকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভসহ মানববন্ধন করেছে ফুলবাড়ী গোলাম মোস্তফা (জিএম) পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। পুলিশি বাধার মুখে পরে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ব্যানার, প্লাকার্ডসহ ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেয়, অভিযুক্ত মেয়র প্রধান শিক্ষকের কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরবে না।
প্রধান শিক্ষক মো. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘ফুলবাড়ী পৌর মেয়র আমাকে মোবাইল ফোনে জানান যে, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ভিজিএফের চাল ১৮ এপ্রিল বিতরণ করা হবে স্কুলে। আমি তখন পিয়নকে দিয়ে হলরুম খুলে দেই। শ্রেণিকক্ষগুলো এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করায় সেগুলো খুলে দেয়া হয়নি।
‘মেয়রকে আমার অফিস কক্ষে বসতে বলে মিটিংয়ে অংশ নেয়ার জন্য আমি দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা হই। বেলা আড়াইটায় স্কুলে ফিরে এসে দেখি সব শ্রেণিকক্ষ খোলা। তখন আমি আমার অফিস স্টাফ রাব্বী ও মহসিনকে বকাবকি করি। এ সময় মেয়র মাহমুদ আলম লিটন ও তার সহযোগী শোয়েব পাপ্পু আমার ওপর মারমুখী হন। আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে জানানো হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে মানববন্ধন করবে তা আমার জানা ছিল না। সোমবার রাতে এক শিক্ষার্থীর মাধ্যমে জানতে পারি তারা এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করবে।’
এ ব্যাপারে শোয়েব পাপ্পু বলেন, ‘প্রধান শিক্ষককে কোনোভাবেই লাঞ্ছিত করা হয়নি বা অশালীন ভাষায় কথাও বলা হয়নি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, ‘পৌর এলাকার দুস্থদের মাঝে চাল বিতরণের জন্য ১৮ এপ্রিল জিএম স্কুলে যাই। তখন প্রধান শিক্ষক বলেন, এসএসসি পরীক্ষার জন্য সিট প্ল্যান করা হয়েছে। সেজন্য রুমে বিতরণ করা যাবে না। হলরুম খুলে দিচ্ছি সেখানে বিতরণ করেন।
‘প্রখর রোদের মধ্যে চাল বিতরণকালে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন আমি বিদ্যালয় ঘুরে দেখি ওই শ্রেণিকক্ষগুলোতে কিছু শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। কোনোপ্রকার সিট প্ল্যানও করা হয়নি। তখন আমি পিয়নকে বলি শ্রেণিকক্ষগুলো খুলে দিতে। আমি ও দুই পুলিশ সদস্য একটি গাছের নিচে বেঞ্চ নিয়ে বসে ছিলাম।’
মেয়র বলেন, ‘বেলা আড়াইটায় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে এসে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দেন। তখন আমি তাকে বলি যে শ্রেণিকক্ষগুলো আমি খুলিয়েছি। গরমের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল তাই। তখন প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেন, আপনি কে? সে সময় আমার সঙ্গে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে বলেন- আপনি মেয়র সাহেবকে চেনেন না? একপর্যায়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। তবে সেখানে কোনো ধরনের অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা হয়নি। প্রধান শিক্ষক নিজের গা বাঁচানোর জন্য নানা কথা বলছেন। তিনিই সেদিনের পুরো পরিস্থিতির জন্য দায়ী। উপরন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের চাল বিতরণে অসহযোগিতা করেছেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওয়াসিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, ‘বিষয়টির সম্মানজনক সুরাহার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে।’