একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও দীর্ঘদিন ধরে পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধী মো. আব্দুল মতিনকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মতিন ভারতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ২০২২ সালে তার অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল।
রোববার রাতে গোপন সংবাদে র্যাব-৩-এর একটি দল সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে এই যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেপ্তার করে। তার বাড়ি মৌলভীবাজার বড়লেখা পাখিয়ালা গ্রামে।
রাজধানীর টিকাটুলি র্যাব-৩-এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ সোমবার এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মতিনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। তিনি ও ওই মামলার আরেক আসামি তারই আপন ভাই আব্দুল আজিজ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বারপুঞ্জিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তারা পালিয়ে বড়লেখায় এসে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মতিন বড়লেখা থানা জামায়াত ইসলামী এবং ১৯৭১ সালে গঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। আব্দুল মতিনসহ রাজাকার বাহিনীর অন্য সদস্যরা মিলে মৌলভীবাজার এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতেন।
র্যাব জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর আব্দুল মতিন, আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তদন্তটি ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর শেষ হয় এবং তদন্ত চলাকালীন এই বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
র্যাব আরও জানায়, মতিন তখন গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তীতে তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমাণ হলে ২০২২ সালের ১৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আব্দুল মতিন, আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মান্নানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, মতিন সিলেটের গোলাপগঞ্জ এলাকায় তার ভাগ্নের বাড়িতে আত্মগোপন করেন। সেখানে তিনি নিজেকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিতেন।
তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে পলাতক জীবন শুরু করার আগে পর্যন্ত মতিন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার ভাগ্নের বাড়িতে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে পলাতক থাকা অবস্থায় গোয়েন্দা তথ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।