মাঝসাগরে ভাসছিল ট্রলারটি। নেই কোনো জেলে বা মাঝি। ভাসমান সে ট্রলার টেনে তীরে নিয়ে আসেন অন্য এক ট্রলারের মাঝি গুরা মিয়া।
তীরে ভেড়ানোর পর নিজের ট্রলার নিয়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে চলে যান গুরা মিয়া। সেখান থেকে ফিরে এসে দেখেন, ভাসমান সে ট্রলার থেকে একে একে বের করা হচ্ছে মরদেহ।
রোববার বিকেলে ট্রলারটি টেনে আনার এমন বর্ণনাই দিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গুরা মিয়া।
তার দাবি, ট্রলাটিতে কারা ছিল, কী ছিল, সে বিষয়ে তার ধারণা ছিল না। ভাসমান অবস্থায় দেখতে পাওয়ায় নিয়ে আসেন নিজের ট্রলারে বেঁধে। আনার পর নাজিরারটেক পয়েন্টে রেখে নিজের আহরণকৃত মাছ বিক্রি করতে যান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। তখনও জানতেন না ট্রলারটিতে মরদেহ রয়েছে।
গুরার ভাষ্য, মাছ বিক্রি করে ফেরার পর হয়তো তিনি ট্রলারটি তল্লাশি করতেন।
ভাসমান ট্রলার পাওয়ার পর পুলিশ বা মালিক সমিতিকে অবগত করেছেন কি না জানতে চাইলে গুরা মিয়া বলেন, নিজের আহরণকৃত মাছ পচে যাওয়ার আশঙ্কায় দ্রুত ঘাটে চলে যান।
তিনি বলেন, ‘ফিরে হয়তো জানাতাম, কিন্তু তার আগেই মানুষের কাছে শুনতে পাই সেখান থেকে মরদেহ মিলছে।’
পরিচয় মিলছে না মরদেহগুলোর
এদিকে ভাসমান ট্রলারটি থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ১০ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। মরদেহগুলো পচে যাওয়ায় শনাক্ত করতে পারছেন না সম্প্রতি সাগরে নিখোঁজদের স্বজনরা। তাদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম।
প্রেক্ষাপট
কক্সবাজারের নাজিরারটেক চ্যানেলে রোববার দুপুরে ভেসে আসা ওই ট্রলারে মরদেহ দেখে পুলিশকে জানান স্থানীয় জেলেরা। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ গিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।
গত ৭ এপ্রিল কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলাপাড়ার প্রয়াত রফিক আলমের ছেলে শামসুল আলম তার নিজস্ব মালিকানাধীন একটি ট্রলার নিয়ে ১৪ জেলেসহ সাগরে মাছ ধরতে যান। এর তিন দিন পর ১০ এপ্রিল সাগর থেকে মাছ ধরে ফিরে আসা কালারমারছড়া ইউনিয়নের আঁধারঘোনা গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে বাবু জানান, ওই ট্রলারের ১৪ জেলে অপর একটি ট্রলারে ডাকাতি করতে যান। সে সময় কয়েকটি ট্রলার এসে তাদের ঘিরে আটকে ফেলে। এরপর ওই ১৪ জনকে আটক করে ট্রলারটি ডুবিয়ে দেয়া হয়। সেই থেকে ট্রলারের মালিক শামসুল আলমসহ ১৪ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
বাবু আরও জানান, ওই ট্রলারে তার আপন ভাই হায়াত উল্লাহও ছিলেন।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব আঁধারঘোনা গ্রামের ছালেহ আহমদের ছেলে আব্দুল মালেক (২৫), মোহাম্মদ রিদুয়ান (২৩), আব্দুস সালামের ছেলে মো. হায়াত (২৪), দানু মিয়ার ছেলে আবদুল মান্নান (২৬), আকবর আলীর ছেলে মাহবুব আলম (২৮), মো. শরীফের ছেলে নুরুছামাদ (২৭), ছামিরাঘোনা এলাকার আবু জাফরের ছেলে নজরুল (২৭), অফিসপাড়া এলাকার হেলাল উদ্দিন (২৫), শাপলাপুর ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে মো. শওকত উল্লাহ (১৮), মুসার ছেলে উসমান গণি (১৭), শাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৩) এবং মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (৪৫)।
মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসতে শুরু করেন নিখোঁজ এসব জেলের স্বজনরা।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার হয়তো ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হতে পারে। পরিচয় শনাক্তের পর পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।