বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেশি গরম কর্কটক্রান্তির প্রভাবে

  •    
  • ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ১৮:২১

আবহাওয়া বিষয়ক কর্মকর্তারা বলছেন, কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঈশ্বরদী অঞ্চলে এ সময় গরম বেশি থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সমুদ্রের গরম হাওয়া।

টানা তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ জনজীবন। বৃষ্টি তো দূরের কথা, আকাশে মেঘের আনাগোনাটুকুও নেই। সকাল থেকে তাপ ঝরাতে থাকে সূর্য। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার টানা রেকর্ড করে চলেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ।

পাবনার ঈশ্বরদীতে তিন দিন আগে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এ বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করে চলেছে চুয়াডাঙ্গা। সোমবারও এই জেলায় তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

চলতি এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই টানা গরম পড়ছে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে। কিন্তু কেন এই অঞ্চলে এতো বেশি তাপমাত্রা?

আবহাওয়া কর্মকর্তারা বলছেন, কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর হওয়ায় এসব এলাকায় এ সময় গরম বেশি থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সমুদ্রের গরম হাওয়া।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে থেকেই চুয়াডাঙ্গা জেলা অতি তীব্র তাপপ্রবাহের আওতায় চলে যায়। অর্থাৎ তাপমাত্রা উঠে যায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।’

বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের হিসাবমতে- ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ ডিগ্রিতে মাঝারি, ৪০ ডিগ্রিতে তীব্র তাপপ্রবাহ আর ৪২ ডিগ্রিতে উঠলে হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

এই তাপপ্রবাহে পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ দিনের বেলা কাজে বের হতে পারছে না। গনগনে সূর্য যেন আগুন ছড়াচ্ছে। রিকশাচালকরাও রোদে রাস্তায় নামার সাহস পাচ্ছে না। ফুটপাতের খোলা দোকানিদেরও দোকান রেখে দূরে ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

টানা তাপপ্রবাহে মৌসুমী ফলের ফলনেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আম-লিচুসহ বিভিন্ন ফলের গুটি শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে কৃষি ফসলের। অধিক তাপমাত্রায় কৃষি জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। সেচ দিয়েও লাভ হচ্ছে না। তার ওপর বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সেচকূপগুলো প্রয়োজন মাফিক সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

সর্বোচ্চ তাপমাত্রার জেলা চুয়াডাঙ্গার আশপাশের এলাকা যশোর, কুষ্টিয়া ও ঈশ্বরদীতেও তীব্র তাপপ্রবাহ রয়েছে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে সোমবার ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিমের এই অঞ্চল কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর। এ কারণে প্রতিবছর গরমের সময় তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। তবে এবার তাপমাত্রা অনেক বেশি উঠেছে।

‘কুমারখালী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে ২০১৪ সালে। এরপর থেকে কোনদিন ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রির মতো এতো তাপমাত্রার রেকর্ড পাওয়া যায়নি।’

তিনি আরও জানান, এপ্রিলের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যে টানা তাপপ্রবাহ চলছে সময়ের বিবেচনায় এত দীর্ঘ তাপপ্রবাহও তিনি দেখেননি।

কর্কটক্রান্তি কি?

পৃথিবীকে ভৌগোলিকভাবে ভাগ করতে কিছু রেখা কল্পনা করা হয়। তেমনি একটি রেখা কর্কটক্রান্তি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব বলেন, ‘বিষুব রেখাকে শূন্য ডিগ্রি ধরা হয়। এই রেখা বরাবর অঞ্চল সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত থাকে। এই রেখা থেকে প্রায় সাড়ে ২৩ ডিগ্রি উত্তরে যে রেখাটি কল্পনা করা হয় তা হল কর্কটক্রান্তি। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর পড়েছে।’

এই ভূগোলবিদ বলেন, ‘বছরে দুইবার কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর সূর্য লম্বালম্বিভাবে কিরণ দেয়। বিষুব রেখা থেকে সূর্য একবার সাড়ে ২৩ ডিগ্রি পর্যন্ত উত্তরে আর একবার দক্ষিণে সাড়ে ২৩ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করে। এই ৪৭ ডিগ্রি অঞ্চলকে গ্রীষ্মমণ্ডল বা উষ্ণমণ্ডল বলা হয়।

‘কর্কটক্রান্তি রেখা যেহেতু শূন্য রেখা থেকে উত্তরে, তাই গরমের সময় এর দক্ষিণ বরাবর তাপ বেশি থাকে। বাংলাদেশে কর্কটক্রান্তি রেখার দক্ষিণ দিকে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চল। এ কারণে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঈশ্বরদী অঞ্চলে এ সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে।’

অধ্যাপক একিউএম মাহবুব দক্ষিণাঞ্চলে এই সময় অতিরিক্ত গরমের আরও একটি কারণ উল্লেখ করেন। বলেন, ‘সাধারণত সাগরের পানি দীর্ঘ সময় তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে। দক্ষিণাঞ্চলে বঙ্গোপসাগর থাকায় এখানকার তাপমাত্রা এই অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করছে। একদিকে কর্কটক্রান্তির দক্ষিণ বরাবর সূর্যের তাপ বেশি অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলের উত্তপ্ততা- দুটি মিলিয়ে এ অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ হচ্ছে।

এবার তাপপ্রবাহ এত বেশি মাত্রায় কেন- এ বিষয়ে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের একটি নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে মনুষ্যসৃষ্ট কিছু কারণ যেমন গাছপালা কেটে ফেলায় সমুদ্র থেকে কিছু দূরের এসব এলাকায় উত্তাপ বাড়ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর