আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। ঘাটে যাত্রী চাপ কম থাকায় ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখো মানুষ আরামদায়কভাবেই বাড়ি যাচ্ছেন। স্বল্প দূরত্বের জেলাগুলোতে যাত্রী পৌঁছে দিতে লঞ্চগুলো নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই ছেড়ে যাচ্ছে।
সরকারি ছুটির প্রথম দিন সকাল থেকেই নৌপথে সদরঘাট নৌপথে ঢাকা ছেড়েছেন অসংখ্য ঘরমুখো মানুষ। সকাল থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক ছোট বড় লঞ্চে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক হাজার যাত্রী। তবে দুপুরের দিকে কমে যায় যাত্রীর চাপ। যারা শেষ সময়ে ছুটি পেয়েছেন মূলত এখন তারাই ঢাকা ছাড়ছেন।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে সদরঘাট লঞ্চটার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সদরঘাট থেকে চাঁদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠিগামী লঞ্চগুলো ছেড়ে গেছে। এ সময় স্বস্তি নিয়ে ঈদযাত্রা করছেন অসংখ্য ঘরমুখো মানুষ। এদিন ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি, সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় অনেককে টিকিট কাটতে দেখা যায়।
দেখা যায়, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে লঞ্চের সুপারভাইজার নাজিম উদ্দিন জানান, লঞ্চ বিকেলে ছাড়বে। কেবিন প্রায় অধিকাংশই বুকিং হয়ে গেছে। এখন ডেকের যাত্রী আসছে, টিকিট বিক্রি করছি। এখন যাত্রীদের দেখা না গেলেও বিকেলে ভীড় বাড়বে।
চাঁদপুর রুটের লঞ্চ এমভি আসা যাওয়া ২ এর স্টাফ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে চাঁদপুরের যাত্রী অনেক চাপ ছিলো। ১২টার পর লঞ্চ আসছিলো আর যাত্রী নিয়ে চলে যাচ্ছিলো৷ আজ সকালেও যাত্রীর চাপ ছিল, দুপুর হয়ে এখন সেই চাপ নেই। টুকটাক যাত্রী আসছেন। বিকেলে আবার চাপ বাড়তে পারে।
ঘাটে কথা হয় ভোলা বোরহানউদ্দিনের যাত্রী মো. রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আজ ছুটি পেয়েছি। পরিবারের ঈদ উদযাপনে বাড়ি যাচ্ছি। ভেবে ছিলাম লঞ্চে ভিড় হবে। তবে সদরঘাটে সেই ভিড় নেই। ভালোই লাগছে। আশাকরি স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে পারবো।’
বরগুনাগামী এম ভি পূবালী-১ লঞ্চে পরিবারসহ বাড়ি যাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবী রাতুল হাসান। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, সদরঘাটে যাত্রী না থাকলেও ঈদের সময় চাপ থাকবে। সেই চিন্তায় সকালে বেড়িয়ে পড়েছি। রাতের যাত্রী আরামদায়ক হলেও রমজানে সবার সমস্যা হয়ে যায়। এখানে কেবিন পেয়েছি, ভাড়াও ঠিক আছে। বেশ আরামেই বাড়ি পৌঁছাতে পারবো আশা করছি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পর্যন্ত পরিমাণ লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে। ঈদ যাত্রায় এবার কোনো ভাড়া বাড়ানো হবে না। আর যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ লঞ্চ চালু হবে। এসব লঞ্চের কেবিন বুকিং ও ডেকের টিকিট ঘাটে এসেই নিতে পারবেন।’
বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক কবীর হোসেন বলেন, ‘আগে সদরঘাট থেকে ২০০টি লঞ্চ ছেড়ে যেতো, এখন চলাচল করে মাত্র ৪৬টি লঞ্চ। এবার ভাড়া বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই, এমন অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত চাঁদপুর সহ স্বল্প দূরত্বের জেলাগুলোতে ৪০টিরও অধিক লঞ্চ ঘাট ছেড়ে গেছে।’
এদিকে ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘাটে নৌপুলিশের টহল দেখা যায়। সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান খান জানান, ‘আমরা নিয়মিত টহল দিচ্ছি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেনো না ঘটে সেদিকে আমরা খেয়াল রাখছি। যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।’