আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে শেষ কর্মদিবসে রাজধানীর প্রধান নৌবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বেড়েছে যাত্রী চাপ। দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো যাত্রী বোঝাই করে ছেড়ে যাচ্ছে ঘাট। তবে পদ্মা সেতু দিয়ে সড়ক পথে সময় কম লাগায় বরিশালরুটে যাত্রী চাপ কিছুটা কম।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভোলা, হাতিয়া, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালীগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রীর চাপ গত কয়েকদিনের তুলনায় বেড়েছে। এদিন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পন্টুনগুলোতে যাত্রী উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে।
ঈদ উপলক্ষে মঙ্গলবার অগ্রিম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন হলেও প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই টিকিট বিক্রি শুরু করেছেন লঞ্চ মালিকরা। তারা জানিয়েছেন, এরইমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সব অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ। এছাড়া ২১ এপ্রিলেরও প্রায় ৬০ শতাংশেরও বেশি বিক্রি হয়ে গেছে। পোশাক কারখানা ছুটি হয়ে গেলে যাত্রী আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।
এদিকে ঈদযাত্রায় বিভিন্ন রুটে লঞ্চের বাড়ানো হয়েছে ভাড়া। ঢাকা বরগুনা রুটে সোমবার পর্যন্ত ডেকের ভাড়া ৫৫০ টাকা রাখা হলেও মঙ্গলবার থেকে ৬০০ টাকা করে রাখা হচ্ছে। অন্যান্য রুটেও একই চিত্র। কেবিনের ভাড়াও বেড়েছে এক শ থেকে দুই শ টাকা পর্যন্ত। তবে অন্যান্য পরিবহনের চেয়ে তুলনামূলক কম ভাড়া নেয়ায় তেমন অভিযোগ নেই যাত্রীদের।
টার্মিনালে কথা হয় বাড্ডা থেকে আসা পুলিশ সদস্য আবু সুফিয়ান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার ঈদে আমার ছুটি নেই। তাই আগেভাগেই পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। গতকালই ফোন করে কেবিন বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম। তাই তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। টার্মিনালে এসেও দেখলাম আগের থেকে ভোগান্তি কম।’
বরিশাল রুটের লঞ্চ সুন্দরবন-১১ এর করণিক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘অন্যান্য রুটে যাত্রীর চাপ বাড়লেও বরিশাল রুটে যাত্রীর চাপ কম। আমরা তেমন যাত্রী পাচ্ছিনা। তবে যেহেতু এই রুটে কিছু অগ্রীম টিকিট বিক্রি হয়েছে। পোশাক কারখানা ও অন্যান্য অফিস ছুটি হলে ২৭ বা ২৮ রমজান থেকে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে।
ঢাকা-ইলিশা রুটে চলাচলকারী পারাবত-১৫ এর কেবিন ইনচার্জ গোলাম রাব্বি বলেন, ‘আমাদের রুটে যাত্রীর চাপ অন্যান্য রুটের চেয়ে একটু বেশি। আমাদের মোটামুটি অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষের পথে। ২১ এপ্রিলেরও ৬০ ভাগের মতো বিক্রি হয়েছে।’
ঢাকা-চরফ্যাশন (ভোলা) রুটে চলাচলকারী এমভি টিপু-১৩ এর সুপারভাইজার মামুন হোসেন বলেন, ‘আজ তুলনামূলক যাত্রীর চাপ একটু বেশি। ডেক-কেবিনের টিকিট প্রায় সব বিক্রি হয়েছে। আমাদের ২৭ রমজানের অগ্রিম টিকিট সব বিক্রি হয়ে গেছে। সেদিন থেকে যাত্রীর চাপ আরও বাড়তে পারে।
লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘ভোলা, হাতিয়া এসব রুটে যাত্রী মোটামুটি বাড়ছে, কিন্তু বরিশাল রুটে যাত্রীর চাপ কম। পদ্মা সেতুর কারণে এই রুটের অনেকেই সড়কপথে চলে যাচ্ছে। এই রুটে আপাতত দুইটি লঞ্চ চলছে। আজ অফিস ছুটি হয়ে যাচ্ছে। কাল থেকে সব রুটেই যাত্রী বাড়তে পারে। আমাদের লঞ্চ প্রস্তুত আছে, যাত্রী বাড়লে রুটগুলোতে লঞ্চও বাড়ানো হবে।’
এদিকে ঈদের আগে পাঁচ দিন সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে মালামাল ও মোটরসাইকেল পরিবহন বন্ধ এবং ঈদের পরে পাঁচ দিন অন্য নদীবন্দর থেকে ঢাকা সদরঘাটে আসা নৌযানে মালামাল ও মোটরসাইকেল পরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর।সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুর রহমান খান বলেন, ‘ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, আনসার, নৌ-পুলিশসহ স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন। সন্দেহজনক কিছু দেখলে তল্লাশিও চালানো হচ্ছে। যাত্রীর চাপ বাড়লে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘মালামাল তেমন পরিবহন করা হচ্ছেনা। যাত্রীদের ব্যক্তিগত কিছু মালামাল তারা নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা মোটরসাইকেল আটকে দিচ্ছি।’
সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক কবির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগের চেয়ে যাত্রীর চাপ বাড়ছে। সোমবার ৪১ টি রুটে ৭১ টি লঞ্চ চলাচল করেছে। মঙ্গলবার ৮৫ টির মতো লঞ্চ বিভিন্ন রুটে ঢাকা নদী বন্দর থেকে ছেড়ে গেছে। এদিন প্রায় ১৮ হাজারের মতো যাত্রী নৌপথে ঢাকা ছেড়েছে।’