বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নজরদারির অভাবে এক্সপ্রেসওয়েতে বেপরোয়া চালকরা, বাড়ছে দুর্ঘটনা

  • প্রতিনিধি,মাদারীপুর   
  • ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ ১৭:৩৯

সচেতন নাগরিক কমিটি মাদারীপুরের সদস্য শাহাদাৎ হোসেন লিটন বলেন, ‘মূলত পরিবহন চালকদের একাধিক ট্রিপের প্রতিযোগিতা আর পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। বাস মালিকরা চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করলে চালকদের ক্লান্তি দূর হবে। দুর্ঘটনাও অনেকাংশে কমে আসবে।’

হাইওয়ে পুলিশ আর প্রশাসনের নজরদারির অভাবে যাত্রাবাড়ী-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। এই মহাসড়কে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার থাকলেও অনেক চালকই তা মানছেন না।

নিয়ম না মানায় এবং হাইওয়ে পুলিশের কঠোর নজরদারির অভাবে ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। ঈদযাত্রায় বেশি ট্রিপের আশায় বিশেষত বাস চালকরা প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালাতে শুরু করেছে। এতে ক্ষুব্ধ যাত্রী, এলাকাবাসী ও নাগরিক সমাজ।

হাইওয়ে পুলিশ অবশ্য বলছে, সড়কে গতি ও দুর্ঘটনা কমাতে চালকদের জরিমানার মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার সড়কে নির্মাণ করা হয় হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়ে। ১১ হাজার ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি ২০২০ সালের ১২ মার্চ জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। এতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছেন যাত্রীরা। কিন্তু এই মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহনের জন্য সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। অথচ আইনকে অমান্য করে ৯০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার বেগে চলছে অধিকাংশ গাড়ি। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।

সবশেষ ১৯ মার্চ ভোরে খুলনা থেকে রাজধানী ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস শিবচরের কুতুবপুরে নিয়ন্ত্রণ হারালে মারা হারান অন্তত ১৯ জন। এছাড়া গত তিন বছরে এই মহাসড়কের মাদারীপুর অংশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৬০ জন।

মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুরের বাসিন্দা অপূর্ব চৌধুরী জয় বলেন, ‘এই আধুনিক মহাসড়কে পরিবহনের গতি আরও কমাতে হবে। গাড়িতে বেশি গতি থাকলে দুর্ঘটনার শঙ্কা বেশি থাকে। এ ব্যাপারে চালক ও যাত্রী উভয়কে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।’

শিবচরের পাঁচ্চরের কায়উম শেখ বলেন, ‘হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে আলাদা লেন থাকায় পরিবহনের গতি বেশি থাকে। তাই এতে সামান্য ভুলেই দুর্ঘটনা বেশি হয়। বাসের মালিক পক্ষ ও চালক সবাইকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে, তা হলে দুর্ঘটনার হার কমে আসবে।’

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার উনশিয়া গ্রামের যাত্রী রাজধানী ঢাকাগামী মজিবুর রহমান বলেন, ‘জরুরি কাজে ঢাকায় যাচ্ছি। কিন্তু সব গাড়ির চালক পাল্টাপাল্টি করে গাড় চালাচ্ছে। এরা কেউই যাত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবছে না।’

বরিশাল থেকে আসা রংধনু পরিবহনের চালক মাজাহার সরদার বলেন, ‘মহাসড়কে কোন গতিরোধক নেই, সামনে থেকে আসা অন্য পরিবহনকে সাইডও দিতে হয় না। তাই গাড়ি চালালে গতি একটু বেশি থাকে। আবার আস্তে চালালে পেছন থেকে অন্য পরিবহন এসে ধাক্কা দেবে, এমন ভয়ও থাকে। তবে, যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছে দিতে চেষ্টা অব্যাহত থাকে।’

ভোলার লালমোহন থেকে প্রাইভেটকার নিয়ে আসা চালক কবির হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কে গাড়ির গতি বেশি থাকায় ২৫০০ টাকা জরিমানা করেছে হাইওয়ে পুলিশ। আগামীতে চেষ্টা করব, স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চালাতে।’

সচেতন নাগরিক কমিটি মাদারীপুরের সদস্য শাহাদাৎ হোসেন লিটন বলেন, ‘দেশের ব্যয়বহুল আধুনিক এই সড়কে দুর্ঘটনা রোধে যাত্রী ও পথচারীর সচেতন হওয়ার পাশাপাশি চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। মূলত পরিবহন চালকদের একাধিক ট্রিপের প্রতিযোগিতা আর পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। বাস মালিকরা চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করলে চালকদের ক্লান্তি দূর হবে। তাহলে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে আসবে।’

মাদারীপুরের শিবচর হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট জয়ন্ত সরকার বলেন, ‘সড়কে যানবাহনের গতি কমাতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। নিয়মিত হাইওয়ে এক্সপ্রেসের বিভিন্ন স্থানে এই কার্যক্রম চলমান। গত তিন বছরে শিবচর হাইওয়ে পুলিশ মামলা দিয়েছে ৩৭০০টি। তারপরও চালকদের অসাবধানতায় মহাসড়কে গতি কমছে না। ফলে দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর