বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। নগরীজুড়ে মোটরসাইকেল শো ডাউন ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন সাদিক আব্দুল্লাহ বিরোধীরা।
রোববার দুপুরের পর থেকে মোড়ে মোড়ে মিছিল আর সন্ধ্যার পর থেকে আয়োজন হয় অন্য কর্মসূচির। এতে যোগ দন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরাও। তারা নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে নানা শ্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে শনিবার দুপুরে নৌকার মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই সন্ধ্যা থেকে সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীদের নিয়ন্ত্রিত ঘাট ও টার্মিনাল দখলে নেয়া শুরু করেন সাদিক বিরোধীরা।
শনিবার সন্ধ্যার পর বরিশালের রুপাতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন থ্রি হুইলার স্ট্যান্ড ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড মহড়া দিয়ে দখলে নেন জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান সুমন মোল্লা ও সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক।
সুমন মোল্লা বলেন, থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা স্ট্যান্ড ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করতো সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী মীর রনি। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাঘবে আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি। চাঁদাবাজমুক্ত থাকবে এই দুই স্ট্যান্ড। সাধারণ মানুষ ও শ্রমিকদের উপর অনেক নির্যাতন করা হয়েছে।
সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী রুপাতলী মিনিবাস টার্মিনালের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, মেয়র সাদিক দায়িত্ব নেয়ার আগে এখানে যারা চাঁদাবাজি করতো তারাই এখন আবার এর দখল নিতে মহড়া দিচ্ছে। মাত্র মনোনয়ন ঘোষণা হলো, এখনই এই পরিস্থিতি। ভবিষ্যতে কী হবে তাতো বোঝাই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আগামী ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত মেয়র থাকবেন সাদিক আব্দুল্লাহ। তাছাড়া বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি। অথচ এদের আচরণে মনে হচ্ছে বরিশাল থেকে আমরা উৎখাত হয়ে গেছি। আমাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নির্দেশ শান্ত থাকার। তাই কিছু বলছিনা।
শনিবার রাত থেকে নগরীর স্পিডবোট ঘাট দখলে নেন আওয়ামী লীগ কর্মী সাদ্দাম হোসেন শাহ ও তার অনুসারীরা। রোববার সকালে পুরো দলবল নিয়ে ট্রিপ প্রতি ১০০ টাকা করে নেয়া বন্ধ করে দেন তারা।
সাদ্দাম বলেন, উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল আমাদের মালিকানাধীন ১০টি স্পিডবোট বন্ধ করে দেন এখানে। তারপর থেকে আমরা মানবেতর জীবনযাপন পালন করা শুরু করি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ঘাটে অবস্থান নিয়েছি। সোমবার থেকে সঠিক নিয়মে বোট চলবে। এখানকার ১৫০ বোট মালিকের একটাই দাবি চাঁদাবাজমুক্ত হোক স্পীড বোট ঘাট।
১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখর দাস খোকন বলেন, ৭ মাস ধরে আমাদের বোট বন্ধ করে দিয়েছে নিরব হোসেন টুটুল। যে টুটুল নৌকার মিছিলে গুলি করছিলে সেই টুটুল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পেটে লাথি মারছে। আমরা প্রতিবাদ করায় আমাদের চাঁদাবাজ বানাইয়া দেছে। ওদিকে আমাদের বোট বন্ধ রাইখা টুটুল চাঁদাবাজি করতেছে।
এই বিষয়ে সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী নিরব হোসেন টুটুল বলেন, ‘স্পিডবোট ঘাটে আমার কোনো বিষয় নেই। সেখানে চলাচলকারী স্পিডবোটগুলো দিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা নিত সাদ্দাম ও তার লোকজন। বিষয়টি সর্ম্পকে মেয়র মহোদয়ের কাছে অভিযোগ গেলে তিনি চাঁদাবাজ সাদ্দামের স্পিডবোটগুলোর চলাচল বন্ধ করে দেন। একই সঙ্গে চাঁদাবাজমুক্ত করা হয় স্পিডবোট ঘাট।
‘কেবল কর্মচারীদের বেতন বাবদ ১০০ টাকা করে নেয়া হতো। মেয়র মনোনয়ন পাননি শুনেই পুরোনো চাঁদাবাজরা আবার ঘাট দখলে নিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। তারা যদি মনে করে মেয়র সাদিকের রাজনীতি শেষ তাহলে ভুল করবে।’
ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে জানিয়ে স্টিমার ঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, স্পীড বোট ঘাটে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি।
এদিকে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী কারো দেখা মেলেনি রোববার সকাল থেকে। বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাবেক সভাপতি আফতাব আহম্মেদের অনুসারীরা এই বাস টার্মিনাল অনেকটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, শনিবার রাত থেকে টার্মিনালে কিছু নতুন মুখের আনা-গোনা শুরু হয়েছে। তবে এরা কারা তা বলতে পারবো না।
বরিশাল নগরীতে আনন্দ মিছিল করা সরকারি ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র কর্ম পরিষদের ভিপি মঈন তুষার বলেন, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা বরিশালে নৌকার মনোনয়ন ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বরিশাল নগরবাসীকে অভিশাপমুক্ত করেছেন। বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ দিনে ঘুমান রাতে বাসায় বসে অফিস করেন। তার বাসাতেই সিটি করপোরেশন আর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। নগরবাসী তার দেখা পেতো না।
‘সব জায়গায় তার দখল দারিত্ব ছিলে। স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি করায় সাধারণ মানুষ বিরক্ত ও ক্ষুদ্ধ ছিল। নগরবাসী এখন আনন্দে আত্মহারা সাদিক আব্দুল্লাহর পতনে।’
২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘বরিশাল নগরবাসী যে জিম্মিদশার মধ্যে ছিল সেটা প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পেরে খোকন ভাইকে মনোনয়ন দিয়েছেন। খোকন ভাই নির্বাচিত হলে চাঁদাবাজমুক্ত হবে বরিশাল।’