কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলস্টেশনে সিগন্যাল ভুলের কারণে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এতে ঢাকামুখী যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
নাঙ্গলকোট রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার জামাল হোসেন জানান, ইফতারের সময় বিকট শব্দে ট্রেনের সংঘর্ষে স্টেশন এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা লাফিয়ে নামতে গিয়ে অনেকে আহত হন। এদিকে দুর্ঘটনার পর হাসানপুর রেল স্টেশনের মাস্টারসহ অন্যান্য কর্মীরা পালিয়ে গেছে। তাদেরকে স্টেশনে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ও যাত্রীদের ভাষ্য, সোনারবাংলা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী ছিলো। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের হাসানপুর রেলস্টেশন অতিক্রম করার সময় এটি সিগন্যাল ভুলের কারণে স্টেশনে দাঁড়ানো মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। লাইনচ্যুত সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন উদ্ধারে লাকসাম থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম, নাঙ্গলকোট থানা-পুলিশ এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার রায়হান মেহেবুব ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন। দুর্ঘটনার তিন ঘণ্টা পর ডাবল লাইন দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল ফের চালু করা হয়েছে।
রেলওয়ে একটি সূত্র জানায়, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রামমুখী মালবাহী ট্রেনটি হাসানপুর স্টেশনের চার নম্বর ফ্ল্যাটফর্মে দাঁড়ায়। এর কিছুক্ষণ পর ফেনী স্টেশন অতিক্রম করে আসা ঢাকা অভিমুখী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি অগ্রসর হতে থাকে। এর মাঝেই হাসানপুর রেল স্টেশনে বিদ্যুৎ চলে যায়। পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের মধ্যে জেনারটর সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হাসানপুর স্টেশনে দায়িত্বরতরা ম্যানুয়ালি সোনার বাংলা ট্রেনটিকে এক নম্বর লাইনে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এদিকে অটোমেটিক সিগন্যাল পেয়ে সোনার বাংলা ট্রেনটি চার নম্বর লাইনে প্রবেশ করে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
আরেকটি সূত্রে জানা যায়, মালবাহী ট্রেনটি ফাউলিং মার্কে ( স্টেশনের নিরাপদ সীমানা, ২২০ মিটার দূরত্বে) দাঁড়ান ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, লাইন ক্লিয়ার করে একইমুখী ট্রেন ছাড়ার কথা। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত গার্ড সঠিক সিগন্যাল দিতে ব্যর্থ হন। তবে এ বিষয়ে হাসানপুর স্টেশনে ওই সময়ে দায়িত্ব পালন করা স্টেশন ইনচার্জ মো. সোহাগের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সোনার বাংলার যাত্রী সাইদুর রহমান বলেন, আমরা ইফতার শেষ করলাম। এমন সময় বিকট শব্দ। এক সময় মনে হলো আমরা আকাশে উঠে যাচ্ছি। পরে মানুষের চিৎকার কানে এলো। দেখলাম আমাদের ট্রেন অন্য ট্রেনের ওপরে উঠে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রায়হান মেহেবুব বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রেলস্টেশনে অবস্থান করছি। এ পর্যন্ত নিহতের খবর পাওয়া যায়নি। অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন। আহত অন্যান্যদের উদ্ধার করে লাকসাম এবং কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে।