বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘অটিজম নিয়ে বিভ্রান্তি ও বৈষম্যের চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে’

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ ১৭:৪৪

বাংলাদেশে কীভাবে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা যায় সে বিষয়ে অনুষ্ঠানটিতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন পেশাদার ব্যক্তিরা এতে আলোচনা করেন।

রাজধানীতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বিশেষত অটিস্টিক শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সচেতন করতে অটিজম বিষয়ক এক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।

শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে বনানীতে ‘এ মিরাকল প্রোজেক্ট অটিস্টিক ফাউন্ডেশন’-এ ডুফা ক্লাবে এই আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে কীভাবে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা যায় সে বিষয়ে অনুষ্ঠানটিতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন পেশাদার ব্যক্তিরা এতে আলোচনা করেন।

আয়োজনটি তিনটি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে শিশু ও মায়েদের জন্য চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ও গবেষক মো. মিজানুর রহমান কাউন্সেলিং সেশন পরিচালকা করেন। দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ সরকারে কর্মরত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা, গবেষক, বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ; বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং দেশের বাইরের প্রথিতযশা গবেষক, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা বক্তব্য দেন।

এ পর্বে তারা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত, নির্দেশনা ও গবেষণাধর্মী তথ্য, উপাত্ত তুলে ধরেছেন। এই পর্বের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে ছিল শিশুদের মাঝে ঈদের পোশাক, খেলনা এবং বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ। পরে উপস্থিত সবশিশু, তাদের অভিভাবকরা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা ইফতারে অংশগ্রহণ করেন।

সবশেষে, অর্থাৎ তৃতীয় পর্বে ছিল “এ মিরাকল প্রোজেক্ট অটিস্টিক ফাউন্ডেশন” -এর ফাউন্ডারদের সঙ্গে উপস্থিত স্কলারদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের চলমান কার্যক্রম ‘রাউন্ড টেবিল সেশন উয়িথ ফাউন্ডার্স রো’ ও ভবিষ্যত কর্মসূচি এবং শিশুদের উন্নয়ন বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব।

অনুষ্ঠানটিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি অনলাইনে চার জন বিশেষজ্ঞ অতিথি যোগ দেন। এদের মধ্যে দাতা প্রতিষ্ঠান জেন ইনিটিয়েটিভ এর সিইও মালাক সাব বলেন, যেহেতু অটিজম আক্রান্ত শিশুদের বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকে, সেহেতু মায়েদের নিজেদের প্রত্যাশার প্রতি যত্নবান হতে হবে।

বেইট আলফার সিইও ড. রোমেল মোর্শেদ বলেন, সমাজে অটিজম নিয়ে যত ধরনের বিভ্রান্তি, অপবাদ ও বৈষম্যের চর্চা রয়েছে সেগুলো থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি অটিস্টিক শিশুদেরকে স্বাভাবিক ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

জর্জ ওয়াসিংটন কারভার একাডেমির এডুকেটর ফারজানা শারমিন অনলাইনে সরাসরি তার অটিজম স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহার করা শিক্ষা উপকরণ ও সেগুলোর ব্যবহার প্রক্রিয়া এবং উপকারতিা তুলে ধরেন।

প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে সিনিয়র ওরাকল ডেটাবেইজ এডমিনিস্ট্রেটর বাশীরুদ্দিন মোহাম্মদ ২১ শতকের প্রযুক্তি কীভাবে অটিস্টিক বিশ্বে সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে সে বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মান্নান হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মাদ মাহমুদুর রহমান, মনোয়ারা অটিস্টিক অ্যান্ড ডিজেবল রেসিডেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আজমা সুলতানা, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং আইসিডিডিআর, বি‘র সাবেক বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আইসিডিডিআর, বি‘র সাবেক ট্রেইনিং কোঅর্ডিনেটর ডা. সমিনা সুলতানা, আইসিডিডিআর, বি‘র সহকারী বিজ্ঞানী সৈয়দা মাহে মুনীর, এ মিরাকল প্রজেক্ট অটিস্টিক ফাউন্ডেশন এর চিফ অপারেটিং অফিসার মিসেস আরমিন সুলতানা। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ও গবেষক মো. মিজানুর রহমান এবং উপস্থাপনা করেছেন নমিরা আহমেদ।

আব্দুল মান্নান হাওলাদার বলেন , অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা উপযুক্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা এবং কর্ম সংস্থানের সুযোগের অভাবে যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হন সেগুলোর টেকসই সমাধান করে তাদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে হবে।

অধ্যাপক মুহাম্মাদ মাহমুদুর রহমান অটিজম ও অটিস্টিক শিশু বিষয়ে গবেষণাধর্মী কাজের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাধি সম্পর্কে বোঝাপড়ার উন্নতি করার কথা বলেন।

সৈয়দা মাহে মুনীর বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রচারাভিযানগুলি অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের সুযোগগুলোকে উন্নত করতে পারে। অভিভাবক, শিক্ষাবিদ এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবিদের লক্ষ্য করে করে আমরা ব্যাধি সম্পর্কে আগে ভাগে বুঝতে ও চিকিৎসা গ্রহনে ভূমিকা রাখতে পারি।

অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, আটিজম আক্রান্ত ব্যাক্তিরা প্রতিনিয়তই নেতিবাচক মনো ভাব ও বৈষম্যের স্বীকার হয় যা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা এবং কর্ম সংস্থানে প্রবেশে বাধা দেয়। এর কারণে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, আত্মসম্মানবোধ, এবং মানসিক সমস্যা দেখা দেয় যা তাদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা ও সহজাত বিচরণকে বাধাগ্রস্ত করে। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি “এ মিরাকল প্রোজেক্ট অটিস্টিক ফাউন্ডেশন" এর ই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং বাংলাদেশ সরকারের সাথে সমন্বয় করে কাজ করার অনুরোধ জানান।

ডা. সামিনা সুলতানা বলেন, অটিস্টিক শিশুদের জন্য আচরণ পরিবর্তনের চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিতে নতুন দক্ষতা এবং আচরণসহ ব্যক্তিদের শেখানোর জন্য পজিটিভ বলবর্ধক (পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্ট) ব্যবহার করা হয় ।

অনুষ্ঠানে আচরণ পরিবর্তনের চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন, প্রয়োগকৃত আচরণ বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে কাজগুলোকে ছোট ছোট ধাপে ভাগ কেরে করতে শেখানো হয় এবং সেগুলো সম্পন্ন করলে পুরষ্কার প্রদান করা হয়। পাইভোটাল রেসপন্স ট্রিটমেন্ট-এ সামাজিক-পারস্পরিক যোগাযোগ শুরু করা ও তাতে সাড়া দেয়ার পদ্ধতিগুলো শেখানো হয় ।

এতে বলা হয়, স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে বাচ্চাদের ভাষাগত দক্ষতা, কথা বলা ও যোগাযেগের দক্ষতাকে বাড়ানো হয়। অকুপেশনাল থেরাপিস্ট প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপগুলি সম্পাদন ও তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশের জন্য নিজের পোশাক পড়া, খাওয়া-দাওয়া, দাঁত ব্রাশ করা ইত্যাদি কাজ শেখানো যায়।

বক্তব্য উপস্থাপন শেষে শিশুদের মাঝে ঈদের পোশাক, গুটি ব্যাগ, খেলনা এবং বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয় ও ইফতার দেয়া হয়। সবশেষে, “এ মিরাকল প্রোজেক্ট অটিস্টিক ফাউন্ডেশন” এর ফাউন্ডারদের সঙ্গে উপস্থিত পেশাজীবীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির চলমান কার্যক্রম, ভবিষ্যত কর্ম-পরিকল্পনা, একটি অটিজম স্কুল প্রতিষ্ঠা ও অটিস্টিক শিশুদের জন্য একটি আবাসিক ভবন নির্মান পরিকল্পনা বিষয়ে ‘‘রাউন্ড টেবিল সেশন উয়িথ ফাউন্ডার্স রো‘‘ বিষয়ক প্রশ্নোত্তর পর্ব সম্পাদনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর