বেশ কয়েক দিন ধরে নওগাঁর ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তীব্র তাপদাহ। তীব্র গরমে ও তাপদাহের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে গরম বেড়ে যাওয়ায় ঝরে পড়ছে আমের গুটি। এতে করে আম চাষিরা ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন।
নওগাঁয় চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছে প্রচুর মুকুল আসে। সেই তুলনায় গুটিও এসেছে প্রচুর, কিন্তু বৃষ্টির অভাব ও তাপদাহে ঝরে যাচ্ছে এসব গুটি। আম বাগানে গাছের নিচে গেলে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য গুটি পড়ে আছে। চাষিরা কোনোভাবেই আমের গুটি ঝরা রোধ করতে পারছেন না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় চলতি মৌসুমে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫২৫ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ দশমিক ৫০ টন হিসেবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৫ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয় সাপাহার ও পোরশা উপজেলায়।
নওগাঁ জেলার কয়েকটি আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে ঝুলছে আম্রপালি, বারি ফোর, গৌড়মতি, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, খিরসা, হাড়িভাঙ্গা, হিমসাগর, গোপালভোগ মল্লিকাসহ নানান জাতের আম। কিন্তু আমের গুটি ঝরা ঠেকাতে আম চাষিরা সেচ ও প্রতিষেধক দিয়েও কাজ হচ্ছেনা বলে জানান।
নওগাঁর পোরশা উপজেলার আমচাষি তবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি ১০ বিঘা বাগানে তিন জাতের আমের চাষ করেছি। এবার প্রচুর মুকুল এসেছিল। বৃষ্টির দেখা নেই। আর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। প্রচুর গরমের কারণে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। আম গাছে সেচ দেয়া হচ্ছে। তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। বৃষ্টি না হলে ফলন কমে যাবে।’
পত্নীতলা উপজেলার আমচাষি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ বিঘা জমিতে আমের আবাদ করেছি। বেশ কয়েকদিন থেকে তীব্র তাপদাহ। তার প্রভাব পড়েছে আম বাগানে। প্রচণ্ড তাপদাহ ও বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। খুব চিন্তায় আছি আমরা। এমনটা হলে ফলনে বিপর্যয় ঘটতে পারে।’
সাপাহার উপজেলার আমচাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এবার বাগানে আমের মুকুল ভালো এসেছিল। তাপদাহের কারণে ২০ বিঘা জমির বাগানের ফলন নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। কারণ বৃষ্টি নেই। বৃষ্টি হলে গুটিগুলো শক্ত হত। গুটি ঝরা রোধ হত। কৃষি অফিসের পরামর্শে আমরা চেষ্টা করছি পানি দিয়ে ঝরে পড়া রোধ করার, তারপরও ঝরে যাচ্ছে।’
নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক হামিদুল হক জানান, শনিবার বেলা ১১টায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয় ৩৬ শতাংশ। বর্তমান প্রেক্ষিতে অতি নিকটে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা এবং আবহাওয়ার তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আম গাছে প্রচুর পরিমাণ মুকুল ছিল। সেই তুলনায় গুটিও অনেক। তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। আমের যে গুটি রয়েছে তা ধরে রাখতে পারলে বাগান মালিকরা ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করছি। যদি অচিরেই বৃষ্টি হয় তবে, আমের গুটি ঝরা রোধ সম্ভব। তবে এ রকম পরিস্থিতি যদি আরও ১৫ থেকে ২০ দিন থাকে তবে, ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা থেকে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমরা আমচাষিদের আম গাছে পানি সেচ দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। যে কদিন বৃষ্টিপাত না হবে সেই কদিন আমবাগানে খুব ঘন ঘন সেচ দিতে হবে। সেচ দেয়ার পর আমগাছের গোড়ায় মাঞ্চিং করে দিতে হবে। প্রয়োজনে বড় বড় গর্ত করে পানি ধরে রাখতে হবে গাছের পাশে। তাতে কিছুটা রস ধরে থাকলে গুটি পড়া রোধ হবে কিছুটা হলেও। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই বৃষ্টিপাত হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।’