বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঐতিহ্য হারাচ্ছে নাসিরনগরের শুঁটকি মেলা

  •    
  • ১৫ এপ্রিল, ২০২৩ ২২:৫৭

শুঁটকি দোকানি কৃষ্ণদাস বলেন, ‘পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় কমে গেছে ঐতিহ্যবাহী বিনিময় প্রথা। অথচ এক বছর আগে এই প্রথা চালু ছিল। এখন নামে মাত্র এই প্রথা চালু আছে। তাই এ মেলার ঐতিহ্য হারিয়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা নাসিরনগর উপজেলার শুঁটকি মেলায়। প্রতিবছরের মতো এবারও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শনিবার থেকে উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামের কুলিকুন্ডা (উত্তর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে দুদিনব্যাপী এ মেলা শুরু হয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে এই মেলার ঐতিহ্য ও আমেজের ভাটা পড়েছে। আর এর প্রধার কারণ পণ্যের বাড়তি দাম।

লোকশ্রুতি অনুযায়ী, দুই শত বছরের বেশি সময় ধরে নাসিরনগর উপজেলায় এই শুঁটকি মেলা চলছে। তবে প্রবীণরা বলছেন, মুদ্রার প্রচলনের সময়কাল থেকে এই মেলা হয়ে আসছে গ্রামটিতে। পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্থানীয় জেলেরা এখনও পহেলা বৈশাখে এ মেলার আয়োজন করেন।

মেলায় আগতরা জানান, শুঁটকি মেলার ঐতিহ্য ছিল পণ্যের বিনিময়ে বেচাকেনা। স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান, চাল, ডাল, শিমের বিচি, আলু, শর্ষে, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা পণ্যের বিনিময়ে এই শুঁটকি কিনতেন। পণ্য বিনিময়ের এ প্রথা স্বল্প পরিসরে কয়েক বছর আগেও ছিল। করোনাভাইরাস মহামারির পর থেকে তা আর নেই। এখন টাকায় লেনদেন হয়। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা শুঁটকি বেচাকেনা করতে এ মেলায় আসেন। শুঁটকির পাশাপাশি মেলায় গৃহস্থালি সামগ্রীসহ শিশুদের নানা ধরনের খেলনাও বিক্রি হয়।

শনিবার সকালে এ শুঁটকি মেলায় গিয়ে দেখা যায়, সিলেট, হবিগঞ্জ, আশুগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, সুনামগঞ্জ, ভৈরবসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এ মেলায় এসেছেন। তারা বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, ছুরি, লইট্টা, পুঁটি, গনা, গুচি, ট্যাংরা, আইড়সহ নানা ধরনের শুঁটকির পসরা নিয়ে বসেছেন। শুধু তাই নয়, শুঁটকি মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের জমিতে বসেছে লোকজ মেলা। মেলায় সার্বিক কেনাবেচা ভালো হওয়ায় খুশি দোকানিরা।

শুঁটকি দোকানি কৃষ্ণদাস বলেন, ‘পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় কমে গেছে ঐতিহ্যবাহী বিনিময় প্রথা। অথচ এক বছর আগে এই প্রথা চালু ছিল। এখন নামে মাত্র এই প্রথা চালু আছে। তাই এ মেলার ঐতিহ্য হারিয়েছে।’

আশুগঞ্জের আড়াইসিধা গ্রামের মুমিন মিয়া ১৯ বছর যাবৎ মেলায় শুঁটকি বিক্রি করে আসছেন। এবার ছেলে বাবুল মিয়াকে নিয়ে মেলায় এসেছেন তিনি। তার দোকানে গিয়ে দেখা যায়, বোয়াল, বাইন, ছুরি, আইল, বামট, রিডাসহ নানা ধরনের শুঁটকি।

মেলায় প্রথমবার আসা আশুগঞ্জের লালপুরের চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, ‘২৫ জাতের শুঁটকি এনেছি। এগুলোর বাজারমূল্য তিন লাখ টাকা। মেলায় বেচাকেনা ভালো হয় বলে লোকমুখে শুনেছি। তাই আশা নিয়ে এসেছি।’

ক্রেতা মো. মহব্বত আলী বলেন, ‘প্রাচীনকালে যখন কাগজের মুদ্রা প্রচলন হয়নি ঠিক তখন থেকে কৃষকেরা তাদের সদ্য উৎপাদিত ফসলের বিনিময়ে বেচাকেনা করতেন। বিশেষ করে শুঁটকি ছিল তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য। তবে কালের বিবর্তনে এই মেলার জৌলুস অনেকটাই হারিয়েছে। শুধু তাই নয় হারিয়েছে চিরচেনা বিনিময় প্রথাও। তারপরেও ঐতিহ্য ধরে রাখতে মেলায় শুঁটকি কেনার জন্যে এসেছি।’

মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওহাব আলী বলেন, ‘বিনিময় প্রথার ঐতিহ্য ধরে রাখতে অল্প পরিসরে পণ্য বিনিময়রে মধ্যে দিয়ে শুঁটকি বিক্রি শুরু হয়। এখন বেশিরভাগই টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর