আসন্ন খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক।
শনিবার দলীয় প্রার্থিতা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে কেসিসি ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন খালেক। তবে ২০০৮ ও ২০১৮ বিজয়ী হলেও ২০১৪ সালের বিএনপির প্রার্থীর কাছে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘তালুকদার আবদুল খালেকের হাত ধরে খুলনার ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। এছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা। তাই তাকেই বারবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।’
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা শেখ হেলালউদ্দিন গত একবছর ধরে জানিয়ে আস্ছেন তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনার মেয়র প্রার্থী হবেন। তিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন সভায় ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র প্রার্থীর নাম। এটা নিয়ে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি রয়েছে।’
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন তালুকদার আবদুল খালেকসহ আরও তিনজন। তারা হলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম এবং মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য রুনু রেজা (রুনু ইকবাল বিথার)।
এ প্রসঙ্গে এমডিএ বাবুল রানা বলেন, ‘গত ৮ এপ্রিল মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় মেয়র পদের জন্য তালুকদার আবদুল খালেককে দলীয় সমর্থন দেন। ওই সভাতেই সাইফুল ইসলাম ও আশরাফুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনার কথা জানিয়েছিলেন। এছাড়া রুনু রেজাও মনোনয়ন কিনেছিলেন। তবে তারা কেউ দলের বাইরের নয়। যেহেতু তালুকদার আবদুল খালেককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সকলে তার পক্ষ হয়ে মাঠে কাজ করবে।’
২০১৮ সালের মে মাসে কেসিসি নির্বাচন হয়েছিল দলীয় প্রতীকে। তখন মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন পাঁচ জন, তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন। কেসিসি’র মোট ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ঘোষিত ২৮৬টি কেন্দ্রের (তিনটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত ছিল) ফলাফলে নৌকা প্রতীকের তালুকদার আবদুল খালেক পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট। আর ধানের শীষ প্রতীকের নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছিলেন ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট। মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন।
মেয়র পদে আরও তিন প্রার্থী ছিলেন। এরা হচ্ছেন হাতপাখা প্রতীকের মুজ্জাম্মিল হক, ভোট পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ৩৬৩টি; জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান (লাঙ্গল), ভোট পেয়েছিলেন ১০৭২ এবং কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র মিজানুর রহমান, ভোট পেয়েছিলেন ৫৩৪টি।
১৯৮৪ সালের ১০ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এটি হবে খুলনার ষষ্ঠ নির্বাচন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কেসিসিতে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কেসিসির জননির্বাচিত মেয়র ছিলেন শেখ তৈয়বুর রহমান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নির্বাচনে মেয়র পদে জয়লাভ করেছিলেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে পরাজিত করে খুলনার মেয়র হয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।