চুরির অভিযোগে জুলহাস ও বিল্লাল হোসেন নামের দুই সহোদরকে গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ।
ঢাকার সাভার ও ও চাঁদপুর থেকে বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের ভাষ্য, দুই সহোদর ১৫ বছরে দুই শতাধিক চুরিতে জড়িত ছিলেন।
ওই দুজনের কাছ থেকে এক জোড়া হাতের চুরি, এক জোড়া কানের দুল, একটি চেইন এবং গলিত রূপান্তরিতসহ ৮ ভরি ১০ আনা স্বর্ণ এবং বিভিন্ন ধরনের চাবি ও চুরিতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন শুক্রবার দুপুরে জানান, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মিরপুর মডেল থানার আহাম্মেদনগরে সিরাজুম মুনীরা নামে একজনের বাসা থেকে আনুমানিক ২৪ ভরি স্বর্ণ ও ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়। সিসিটিভি দেখে চোর শনাক্ত করে পুলিশ। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাভারের গেণ্ডা বাসস্ট্যান্ড থেকে বিল্লাল হোসেন এবং তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদপুরের মতলব থেকে জুলহাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া চোরাই এসব স্বর্ণ রাখার অভিযোগে লিটন বর্মণ নামে এক স্বর্ণ দোকানদারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৫ বছর ধরে চুরি
মিরপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, ভোলার লালমোহন উপজেলায় বাড়ি জুলহাস ও বিল্লালের। দুজন চুরি শুরু করেন ২০০৮ সাল থেকে। তখন থেকে ১৫ বছর ধরেই চুরি করছেন তারা।
মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘তাদের দেওয়া তথ্য মতে, এই ১৫ বছরে তারা দুই শতাধিক চুরি করে। চুরি করেই তারা অন্য জেলায় চলে যায়। ফলে অধিকাংশ ঘটনায় তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এতগুলো চুরি করলেও তারা ধরা পড়ে মাত্র ১০ বারের মতো। আর মামলা হয়েছে মাত্র তিনটি।
‘অন্যান্য সবাই সবকিছু চুরি করলেও জুলহাস ও বিল্লাল শুধু স্বর্ণ ও নগদ টাকা চুরি করে। কারণ এই দুইটি সহজেই বহনযোগ্য।’
শুধু দিনে চুরি
দুই ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে মিরপুর থানার ওসি জানান, সাধারণত সব চোর রাতের বেলা চুরি করলেও ব্যতিক্রম এই দুই সহোদর। তারা চুরি করে দিনের বেলা। দিনের বেলা সাধারণত যে সময়টাতে শিশুরা স্কুলে থাকে, সেই সময়টাকেই তারা চুরির জন্য বেছে নেন। সেই সময় ঘরের পুরুষ সদস্যরা অফিসে থাকেন। আর নারী সদস্যরা শিশুর স্কুলে থাকে। ফলে বাসা পুরো ফাঁকা থাকে। গাড়ি চালানোর সুবাদে আগে থেকেই এমন একটি বাসা টার্গেট করেন বিল্লাল। পরে জুলহাসসহ এসে টার্গেটকৃত সেই বাসায় চুরি করেন।
১১ বছর বয়সে শুরু, ছোট ভাই গুরু
পুলিশ জানায়, দুই ভাইয়ের মধ্যে জুলহাস বড়, বিল্লাল ছোট। বয়সে ছোট হলেও চুরিতে এগিয়ে বিল্লাল। মাত্র ১১ বছর বয়স থেকেই চুরি শুরু করেন বিল্লাল। তখনও শুধু স্বর্ণ আর টাকা চুরি করতেন তিনি। পরে তার কাছ থেকেই চুরি শেখেন জুলহাস। দুই ভাই মিলে চুরি করলে বিল্লাল সবসময়ই বাসা টার্গেট করেন এবং পাহারায় থাকেন। আর চুরি করেন জুলহাস।
৩০ মিনিটেই ২৪ লাখ টাকা চুরি
পুলিশ জানায়, সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে মিরপুরের ওই বাসার তৃতীয় তলায় ওঠেন দুই ভাইয়ের একজন। এরপর দরজার তালা, ঘরের ভেতর প্রতি আলমারির তালা ভাঙেন তিনি। প্রতি ওয়ারড্রোবের লক খুলে, প্রতি ড্রয়ার খুলে তিনি ২৪ ভরি স্বর্ণ এবং ৬০ হাজার টাকা চুরি করেন। আর এসব কিছু করতে তার সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। ৩০ মিনিটেই প্রায় ২৪ লাখ টাকার মালামাল চুরি করেন তিনি।
জামাতা চুরি করেন, শ্বশুর বিক্রি করেন
মিরপুর থানা পুলিশ জানায়, জুলহাসের শ্বশুর মো. আলাউদ্দিন থাকেন চাঁদপুরের মতলবে। প্রতিবার চুরি করার পরপরই শ্বশুরবাড়ি চলে যান জুলহাস। জামাতার এই চুরির কথা শ্বশুরের অজানা নয়, কিন্তু তিনি এতে বাধা না দিয়ে সহযোগিতা করেন।
পুলিশ আরও জানায়, জামাতা জুলহাস স্বর্ণ চুরি করে তা শ্বশুরের হাতেই তুলে দেন। আর শ্বশুর সেই স্বর্ণ বিক্রি করেন। মিরপুর থেকে চুরি করা স্বর্ণও জুলহাস তার শ্বশুরের হাতেই তুলে দেন। শ্বশুর সেই স্বর্ণ চাঁদপুর উত্তর মতলবের ছেঙ্গারচর বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করে দেন। অভিযান চালানোর সময় জামাতা জুলহাস গ্রেপ্তার হলেও পালিয়ে যান শ্বশুর আলাউদ্দিন।