বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে ১৯৭৭ সালে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মনোযোগ দেবে।
ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মানবাধিকার কর্মকর্তা সোফিয়া মেউলেনব্রেগ ১৯৭৭ সালে নিহত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের নেটওয়ার্ক ‘মায়ের কান্না’র প্রতিনিধিদের এই আশ্বাস দেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আমেরিকান ক্লাবে নির্ধারিত বৈঠকে ‘মায়ের কান্না’র একটি প্রতিনিধি দল সোফিয়া মেউলেনব্রেগ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সোফিয়ার কাছে এই হত্যকাণ্ড ও নির্যাতন সংক্রান্ত নথিপত্র হস্তান্তর করেন। তাতে তুলে ধরা হয়, সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর বহু সদস্যকে তথাকথিত বিচারের আগেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। অক্টোবরে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কিন্তু নথি অনুযায়ী তাদের দোষী সাব্যস্ত ও কারাগারে থাকার কথা জানিয়ে পরিবারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল ডিসেম্বরে।
মায়ের কান্না’র আহ্বায়ক কামরুজ্জামান লেলিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মানবাধিকার কর্মকর্তাকে জানান, “তৎকালীন সামরিক শাসক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এই জঘন্য অপরাধের ‘মাস্টারমাইন্ড’ এবং সেই বিএনপিই এখনও ন্যায়বিচারের পথে প্রধান বাধা।”
নথি গ্রহণ ও প্রতিনিধি দলের দুর্ভোগের কারণ শোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান নেটওয়ার্ক প্রতিনিধিরা।
সোফিয়া তার সঙ্গে দেখা করতে আসার জন্য প্রতিনিধি দলকে ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে তিনি ভুক্তভোগীদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানান।
মায়ের কান্না’র সদস্যরা বার বার চাপা পড়ে যাওয়া তাদের নিপীড়িত কণ্ঠের ন্যায়বিচারের দাবি সম্ভব সবরকম উপায়ে এবং সব জায়গায় উত্থাপন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অনুরোধ করেন।
বৈঠকে মায়ের কান্নার আহ্বায়ক কামরুজ্জামান লেলিনের সঙ্গে অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিলকিস চৌধুরী, নেটওয়ার্কের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার প্রশান্ত বড়ুয়া প্রমুখ।
সংগঠনের পরিচিতি তুলে ধরতে এর আহ্বায়ক কামরুজ্জামান লেলিন বলেন, “১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর দেশে বিদ্রোহ দমনের নামে সেনা ও বিমানবাহিনীর যেসব সদস্যকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’। সংগঠনটি সেই হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির দাবিতে ২০১৮ সাল থেকে কাজ করছে।”
লেলিন আরও বলেন, ‘১৯৭৭ সালে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর হওয়া ১২১ জন, কুমিল্লায় ৭২ জন, বগুড়ায় ১৬ জন এবং রংপুরে ৭ জনের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। কিন্তু বিমানবাহিনীর হিসাবে ৫৬১ জন সৈনিক নিখোঁজ হয়েছেন, যাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি ঘটনার দিন যারা ছুটিতে ছিলেন তাদেরও ধরে এনে ফাঁসি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।’