সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। তার প্রার্থীতা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে লন্ডনের একটি অনুষ্ঠানে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন সিলেটের বর্তমান এই মেয়র। এই ইঙ্গিতের আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
লন্ডনের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেনর পার্ক এলাকার রয়েল রিজেন্সি সেন্টারে যুবদলের ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বিষয়ে প্রথম প্রকাশ্যে কথা বলেন আরিফ। এতে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেয়ারই ইঙ্গিত দেন তিনি।
এর আগে সোমবার তারেক রহমানের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন আরিফুল হক।
ওই সভায় আরিফুল হক বলেন, ‘আমার দল এই স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। এই সিদ্ধান্তে আমিও অটল। আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের বিজয় অর্জিত হবে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ অবস্থায় আরিফ ভোটে দাঁড়াবেন কি না এ নিয়ে গুঞ্জন ছিল।
বিএনপির রাজনীতি করলেও সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গেও ঘনিষ্টতা রয়েছে আরিফুল হকের। মেয়র হিসেবে প্রথম মেয়াদে সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এবং দ্বিতীয় মেয়াদে সিলেট-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের বিশেষ আস্থা অর্জন করেন আরিফ। যা সিলেটের আওয়ামী রাজনীতিতেও অন্যতম আলোচিত বিষয়। এ ছাড়া গত জুনে সিলেটের বন্যার ভয়াবহতা দেখতে এসে আরিফের প্রশংসা করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে আরিফের এই ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিএনপির রাজনীতিতেও কানাঘোষা ও সন্দেহ ছিল।
এ ছাড়া অতি সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার। এই নির্বাচনী সাত্তারের পক্ষ নেয় আওয়ামী লীগ। যা রাজনীতিতে ‘উক্তিল আব্দুস সাত্তার মডেল’ মডেল হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। এমন মডেলে সিলেটে কিছু ঘটবে কি না তা নিয়েও গুঞ্জন চলছিল।
এমন আলোচনার মধ্যেই গত ২ এপ্রিল হঠাৎ করে লন্ডন সফরে যান আরিফুল হক। এর পরদিনই সিলেট সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আরিফের হঠাৎ লন্ডন সফর তার নির্বাচনের প্রার্থীতা নিয়ে গুঞ্জন আরও বাড়িয়ে দেয়। আরিফের ঘনিষ্ঠ জনদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমেও খবর প্রকাশিত হয়, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে ম্যানেজ করতেই সেখানে গেছেন তিনি। লন্ডন থেকে ফিরেই আরিফ প্রার্থীতার ঘোষণা দিতে পারেন বলেও খবর বের হয়।
আরিফুল হকের প্রার্থীতা এতো আগ্রহ ও গুঞ্জন সত্ত্বেও এই ইস্যুতে একেবারে চুপ ছিলেন সিলেটের নগরপিতা।
তবে লন্ডনে মঙ্গলবার নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে দেন তিনি। ভোটে না দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেন তিনি।
এর আগে সোমবার তারেক রহমানের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন আরিফুল হক।
তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের বরাত দিয়ে ওই সভায় আরিফুল বলেন, ‘আমার সঙ্গে আমার নেতার মিটিং হয়েছে। তিনি আমাকে একটা সিগন্যাল দিয়েছেন। এটা রেড নাকি গ্রিন তা সময় হলেই জানা যাবে।’
যুক্তরাজ্য বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনের অভিজাত কিংস্টন এলাকায় সোমবার তারেক রহমানের সঙ্গে আরিফুল হকের বৈঠক হয়। এ সময় আরিফকে সিটি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার অনুরোধ করেন তারেক রহমান। তারেকের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আরিফুল হক আগামী সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে তাকে দলীয় মনোনয়ন প্রদানের দাবি জানান। তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আরিফের দাবি বিবেচনা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।