বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাহাড়ধস: চসিকের ৩ প্রকৌশলী, কাউন্সিলরের নামে মামলা

  • প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম    
  • ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ১০:১২

পরিবেশ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম মহানগর) পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, ‘এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় কোনো পাহাড় বা টিলা কাটা হবে কি না বা কী পরিমাণ কাটা হবে বা পাহাড় ধস রোধে কোনো নিরাপত্তা দেয়াল তৈরি করা হবে কি না এরকম কোনো তথ্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়নি। অনুমোদনও নেয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই পাহাড় কেটে সড়ক তৈরিতে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। এই পাহাড় কাটার ফলে ৭ এপ্রিলের দুর্ঘটনা ছাড়াও বর্ষা মৌসুমে আরও ধসের আশঙ্কা রয়েছে ৷ তাই সাতজনকে আসামি করে সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মামলাটি করেছেন।’

চট্টগ্রামে আকবর শাহ থানার বেলতলি ঘোনা এলাকায় পাহাড় কাটার ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তিন প্রকৌশলী, উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ সাতজনের নামে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ বাদী হয়ে মঙ্গলবার আকবর শাহ থানায় মামলাটি করেন।

মামলার সাত আসামি হলেন চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়ব, নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ প্রকল্প পরিচালক জসিম উদ্দিন, সিনিয়র সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) ওয়ালী আহমেদ, মেসার্স এবি-হক ব্রাদার্সের মালিক ওমর ফারুক ও তার স্ত্রী তাকিয়া বেগম, স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম এবং স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাইল।

পরিবেশ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম মহানগর) পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস জানান, ৭ এপ্রিল বিকেলে আকবর শাহ থানার বেলতলী ঘোনায় পাহাড় কাটার সময় পাহাড় ধসে মজিবুর রহমান খোকা নামের একজন নিহত ও তিনজন আহত হন। সেসময় সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মতিন, হাছান আহম্মদ ও পরিদর্শক মো. মনির হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই খাড়া ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড় কেটে সড়ক তৈরির কাজ চলছিল। সেখানে ১০ শ্রমিক কাজ করছিলেন, এরমধ্যে ৫ শ্রমিক পাহাড় ধসে চাপা পড়েন ৷ পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ৫০ হাজার ফুট পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়া যায়।

এর আগে ২৬ ডিসেম্বর একই স্থানে ১৩ হাজার ৩০০ ফুট পাহাড় কাটার প্রমাণ পায় পরিবেশ অধিদপ্তর। এর কারণে স্থানীয় কাউন্সিলর ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (চউক) শুনানির জন্য নোটিশ দেয়া হয়। এরমধ্যে ৫ জানুয়ারি পাহাড় কাটা বন্ধে ওই পাহাড়ের মালিকানায় থাকা অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডও পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়। অভিযোগের বিষয়ে ১০ জানুয়ারি এবং ৩১ জানুয়ারি শুনানি করা হয়। কিন্তু নোটিশ দেয়া সত্ত্বেও শুনানিতে চসিক ও চউকের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

এরমধ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি ওই স্থানে অভিযান পরিচালনা করে শাহাজান নামের এক এক্সকেভেটর চালককে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সেসময় শাহনাজ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের নির্দেশে স্থানীয় ইসমাইল নামের একজনের মাধ্যমে ওই পাহাড়টি কাটেন তিনি। পাহাড়টি খাড়াভাবে কাটায় যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়ার আশঙ্কা ছিল।

তাছাড়া দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ১০ এপ্রিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। কমিটিতে এসময় চসিকের প্রতিনিধি ওয়ালী আহমেদ জানান, ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওই এলাকায় সড়ক তৈরির জন্য চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়বের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এবি-হক ব্রাদার্সের ওমর ফারুকের সঙ্গে চুক্তি হয়। উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আকবর শাহ এলাকায় লেইন বাই লেইন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়ক তৈরির এই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন উপপ্রকল্প পরিচালক জসিম উদ্দিন। চুক্তিপত্রে টিকাদার ওমর ফারুকের স্ত্রী তাকিয়া বেগমকে নমিনি করা হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ওয়ালী আহমেদ নিজেই উপস্থিত ছিলেন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম মহানগর) পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, ‘এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় কোনো পাহাড় বা টিলা কাটা হবে কি না বা কী পরিমাণ কাটা হবে বা পাহাড় ধস রোধে কোনো নিরাপত্তা দেয়াল তৈরি করা হবে কি না এরকম কোনো তথ্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়নি। অনুমোদনও নেয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই পাহাড় কেটে সড়ক তৈরিতে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। এই পাহাড় কাটার ফলে ৭ এপ্রিলের দুর্ঘটনা ছাড়াও বর্ষা মৌসুমে আরও ধসের আশঙ্কা রয়েছে ৷ তাই সাতজনকে আসামি করে সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মামলাটি করেছেন।’

পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরও এই মামলার আসামি করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর