বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যুক্তরাজ্য থেকে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ০১:৩০

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শুরুতে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা রাখেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে অর্থোপেডিক ও অ্যাকসিডেন্ট সার্জন ডা. এম. এ. মবিনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল, যেটি ছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের জন্য প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল। ৪৮০ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালাতেন পাঁচ বাংলাদেশি চিকিৎসক ও বিপুলসংখ্যক নারী স্বেচ্ছাসেবী, যাদের চিকিৎসাবিষয়ক পূর্বপ্রশিক্ষণ ছিল না।

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। আট দশকের এ জীবনের উল্লেখযোগ্য অংশ তিনি ব্যয় করেছেন গণমানুষের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায়। তার শৈশব কেটেছে কলকাতায়। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় চলে আসে তাদের পরিবার।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, যেখানে তিনি যুক্ত হন বামপন্থি রাজনীতিতে। ঢামেক ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে হাসপাতালে দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরেন। ঝামেলাপূর্ণ ছাত্রজীবন শেষে তিনি ১৯৬৪ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন।

পরবর্তী সময়ে জেনারেল ও ভাস্কুলার সার্জারিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করতে তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ সময়কালে দেশটিতে জেনারেল ও ভাস্কুলার সার্জন হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭০ সালে রয়্যাল কলেজ অফ সার্জনসে এফআরসিএসের প্রারম্ভিক পরীক্ষায় পাস করেন তিনি, তবে এফআরসিএস ফাইনাল পরীক্ষা রেখে যুক্তরাজ্য থেকে ছুটে এসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শুরুতে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা রাখেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে অর্থোপেডিক ও অ্যাকসিডেন্ট সার্জন ডা. এম. এ. মবিনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল, যেটি ছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের জন্য প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল। ৪৮০ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালাতেন পাঁচ বাংলাদেশি চিকিৎসক ও বিপুলসংখ্যক নারী স্বেচ্ছাসেবী, যাদের চিকিৎসাবিষয়ক পূর্বপ্রশিক্ষণ ছিল না।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা

গ্রামের মানুষকে কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা দিতে ১৯৭২ সালে বড় চ্যালেঞ্জ নেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পূর্বপ্রশিক্ষণহীন নারী-পুরুষদের নিয়ে ফিল্ড হাসপাতাল চালানোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এ বিষয়ক প্রথম ধারণাপত্র ‘বেসিক হেলথকেয়ার ইন রুরাল এরিয়া’ তথা গ্রামাঞ্চলে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা উপস্থাপন করা হয় ১৯৭২ সালের এপ্রিলে। পরবর্তী সময়ে এটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনার ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এমন এক বহুমুখী প্রতিষ্ঠান, যার আওতায় কৃষিভিত্তিক সমবায়, কমিউনিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও হাসপাতাল, নারীদের পেশাগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়।

প্যারামেডিকস ধারণাটি দেশে প্রথম পরিচিত করায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার সেটি গ্রহণ করে।

জাতীয় ওষুধ নীতি

১৯৮২ সালে বাংলাদেশে জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়নে প্রাণপুরুষ হিসেবে ভূমিকা রেখে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ নীতি প্রণয়নের আগে দেশের বাজারে ৪ হাজার ওষুধ ছিল, যেগুলোর বেশির ভাগ বহুজাতিক কোম্পানির তৈরি কিংবা আমদানি করা। এসব ওষুধের সিংহভাগ ছিল সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

জাতীয় ওষুধ নীতি এসে সবকিছু পাল্টে দেয়। এ নীতি প্রণয়নের পর উন্নয়নশীল দেশের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনায় আমদানিকৃত ওষুধের সংখ্যা কমিয়ে ২২৫ করা হয়।

জাতীয় ওষুধ নীতিতে জেনেরিক ওষুধ উৎপাদন ও সেটি স্থানীয়ভাবে তৈরির ওপর জোর দেয়া হয়। এর ফলে কম মূল্যে বড় পরিসরে ওষুধ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেই নীতির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এখন ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ।

সম্মাননা

জনস্বাস্থ্য নিয়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বেশ কিছু সম্মাননা পান। ১৯৭৭ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার পান। ১৯৯২ সালে সুইডেনের রাইট লিভলিহুড অ্যাওয়ার্ড পান এ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য অধিকারকর্মী।

১৯৮৫ সালে ফিলিপাইনের বিখ্যাত র‌্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড পান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের ‘ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরোজ’ অ্যাওয়ার্ড পান।

এ বিভাগের আরো খবর