রাজধানীর বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের সদস্যরা।
রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে আলেয়া হিজড়া তার হজের টাকা থেকে ২ লাখ তহবিলে জমা দেন। এরপরে সোয়া ১১টার দিকে বঙ্গবাজারে উপস্থিত হন কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তার নেতৃত্বে ২৬ লাখ টাকা জমা দেয়া হয় তহবিলে।
বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম ১০ লাখ টাকা দেব। কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করেছিলাম তোমরাও ১০ লাখ টাকা দাও। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বললাম তুমিও ৫ লাখ টাকা দাও। আমরা ২৫ লাখ টাকা তাৎক্ষণিক ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের প্যানেল মেয়রও ১ লাখ টাকা দিয়েছেন। আমরা ২৫ লাখ টাকার কথা বললেও ২৬ লাখ টাকা হস্তান্তর করেছি আজ।’
এই ২৬ লাখ টাকা দেয়ার পর বঙ্গবাজারে আসেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা নিজেদের এক দিনের বেতন ও ইফতারের খরচ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেন।
দুপুর ১২টার দিকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের অফিসার্স ও কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার জন্য আমাদের সদরদপ্তরের এক দিনের বেতন ও ইফতারের খরচের ২ লাখ টাকা তুলে দিয়েছি। এর একটাই কারণ, আমরা যে কাজগুলো কাজছি, তা অনেক ব্যবসায়ী মনে করেন তাদের বিরুদ্ধে, কিন্তু আমরা যে তাদের পাশে আছি, এ জন্য এটি একটি প্রতীকী অংশগ্রহণ। এখানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যেন ভালোভাবে ঈদের আনন্দ করতে পারে।’
সবশেষে বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ২০ লাখ টাকা সহায়তা করেন হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ হিজড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মির দিপালী হিজড়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে আমরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলেছি। আজকে তাদের এই বিপদের সময় আমরা আমাদের এবারের ঈদের যেসব কেনাকাটা রয়েছে, সেই কেনাকাটা না করে আমরা আমাদের এই ব্যবসায়ী ভাইদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। সারা দেশ থেকে ২০ লাখ টাকা আমরা তুলেছি। সেই টাকা আজ তাদের কাছে দিতে এসেছি। তারা বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকব।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তালিকা করার বিষয়ে আমরা বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতিকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা দেখভাল করছেন, তবে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে আমরা ব্যবস্থা নিব। এখানে যারা সদস্য তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন কে থাকবে, কে থাকবে না। এখন পর্যন্ত ২৯০০ ব্যবসায়ীর তালিকা করা হয়েছে।
‘তালিকায় ব্যবসায়ীদের রাখা দরকার। কারণ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসায়ীরা। কারণ এখন ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়। তাই শতভাগ ব্যবসায়ীদের তালিকা হওয়া প্রয়োজন। তারপর এখানে ভবন মালিক যারা আছেন, তারা কে কী বরাদ্দ পাবেন, সেটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র দেখবেন। কারণ এই মার্কেটের মালিক সিটি করপোরেশন।’
অগ্নিকাণ্ডের স্থানে ব্যবসায়ীরা বসতে চাইছেন, কিন্তু এখনও ধ্বংসস্তূপ সরানো যায়নি। এটা সরাতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম দুই-এক দিনেই পরিষ্কার করা যাবে, কিন্তু যেখানে হাত দিচ্ছে সেখানেই আগুন। ফলে নতুন করে আবার পানি দিয়ে নেভাতে হচ্ছে।
‘এই কারণে সরাতে সমস্যা হচ্ছে। আগুনসহ ট্রাকে তোলা যাবে না। এটা ঝুঁকিপূর্ণ। ঈদের আগে ব্যবসায়ীরা বসতে পারবে কি না, এটা এখন বলতে পারছি না।’